মো:রিপন হাওলাদার
বরগুনা জেলা প্রতিনিধি
বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার সীমানা-সংলগ্ন ২১ গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দার চলাচলের একমাত্র ভরসা নড়বড়ে এক বাঁশের সাঁকো। এই স্থানে খেয়া পারাপার থাকলেও ২৫ বছর আগে খেয়াও বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই এই সাঁকো দিয়েই চলাচল করছে আড়পাঙ্গাশিয়া ও পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের ২১ গ্রামের শত শত শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।
জানা যায়, আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চরকগাছিয়া এবং তালতলীর পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নে কলারং গ্রামের সীমানাঘেঁষা খালের ওপর নির্মাণ করা হয় এই সাঁকোটি। চরকগাছিয়া, পচাকোড়ালিয়া, কলারং, আড়পাঙ্গাশিয়া, ঘোপখালী, চান্দখালীসহ আশপাশের ২১ গ্রামের মানুষের উপজেলা সদর ও অন্য ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সাঁকো।
দৈনন্দিন প্রয়োজন, কর্মসংস্থান ও লেখাপড়ার কারণে সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করতে হয় স্থানীয়দের। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রামগুলোর নারী-শিশু, রোগী, গর্ভবতী ও বৃদ্ধদের। এই খালে পূর্বে একটি খেয়া নৌকা থাকলেও ২৫ বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে এই সাঁকোটি নির্মাণ করেন গ্রামবাসীরা। প্রতিবছর বর্ষার আগে সাঁকোটি মেরামত করে নেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের ২ শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পেরিয়ে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় যাতায়াত করছে। এ সাঁকো পার হয়েই প্রতিদিন কলারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চড়কগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চড়কগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাহলান বাড়ি কওমি মাদরাসা ও শহিদুল ইসলাম কলেজের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীকে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়াও ভোগান্তি পোহাতে স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ীসহ অন্য পেশার মানুষের।স্থানীয়রা জানায়, এই বাঁশের তৈরি সাঁকো পারাপারে যেমন রয়েছে ঝুঁকি তেমনি প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা আশ্বস্ত করলেও পরে এ বিষয়ে তারা কোনো হস্তক্ষেপ করেন না।
কলারং গ্রামের কৃষক আখতার হোসেন বলেন, আমার জমি খালের ওপার। চাষাবাদের জন্য রোজ সাঁকো পার হয়ে জমিতে আসা যাওয়া ও ফসল আনা নেওয়া করতে হয়। গত শীতে খড়ের আঁটি নিয়ে সাঁকো পারাপারের সময় দুই বাঁশের ফাঁকে পা আটকে গিয়েছিল আমার। আল্লাহ সহায় ছিল, তাই পা ভাঙেনি।
চরকগাছিয়া গ্রামের খলিল মৃধা বলেন, ছোটবেলা থেকেই এখানে সাঁকো দেখে আসছি। গ্রামবাসী খুব কষ্টে এ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে। বেশি কষ্ট হয় অসুস্থ, বয়স্ক ও গর্ভবতীদের। এখানে ব্রিজ নির্মাণ করা হলে আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন উপকৃত হবে।
কলারং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, খালের দুপাশে দুই উপজেলা হওয়ায় ব্রিজ নির্মাণে কোনো উপজেলাই উদ্যোগ নিচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কথা ভেবে দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি। ব্রিজ না হলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
তালতলীর উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাফর মিয়া বলেন, সাঁকোটি আমি পরিদর্শন করেছি। তালতলী ও আমতলীর কয়েকটি গ্রামের মানুষ এই সাঁকোর ওপর নির্ভরশীল। আমি ওপারের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ করা হবে, যাতে দ্রুত এই সেতুটি নির্মাণ করা যায়।
আমতলীর আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেলী পারভীন বলেন, আমার স্বামী চেয়ারম্যান থাকাকালীন এই স্থানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন। সেটা এখন কী অবস্থায় আছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব। তাছাড়া পঁচাকোড়ালিয়ার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাঁশের সাঁকোর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এই গ্রামগুলোর বাসিন্দার দুর্ভোগের কথাও কেউ কখনও বলেনি আমাকে। আমি ওখনকার ইউপি চেয়ারম্যানদের এলজিইডিতে আবেদন করতে বলব। আমিও চেষ্টা করব যাতে ওখানে একটি ব্রিজ হয়।