বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
বগুড়া শহরের তিনটি সরকারি কলেজে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ওই তিন কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মাস্ক ছাড়া কোন শিক্ষার্থীকেই ক্লাসে ঢুকতে দেওয় হবে না। পুণ্ড্রকথার সঙ্গে আলাপকালে সরকারি আজিজুল হক, শাহ্ সুলতান এবং মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষগণ স্বাস্থ্যবিধি মানতে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে আরও নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথাও জনিয়েছেন।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে এবং প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের সামনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা রাখবেন। শাহ্ সুলতান কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রবেশ পথে প্রধান ফটকের দুই পাশে ১২টি বেসিন বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি’না তা তদারকির জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), রোভার স্কাউট এবং রেডক্রিসেন্টের কলেজ ইউনিটকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলেছেন ওই দুই কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তবে সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি’না সেটি মনিটরিংয়ের জন্য কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছেন মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার ১০দিনের মাথায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় চলতি বছরের মার্চে একবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই করোনার সংক্রমণ আবারও বেড়ে গেলে সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
বগুড়া শহরের তিনটি কলেজের মধ্যে ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ২৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ১৯৬৩ সালে স্থাপিত সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছেন ৭ হাজার এবং ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে পড়ালেখা করছেন আরও ১৪ হাজার শিক্ষার্থী।
সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রস্তুতি
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ শাহজাহান আলী জানান, করোনার কারণে পাঠদান বন্ধ থাকলেও তাদের কলেজের দাপ্তরিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সে কারণে ক্যাম্পাস ও শ্রেণি কক্ষগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হয়। তবে তার পরেও আবারও নতুন করে সবকিছু পরিষ্কার করা হবে। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুাযায়ী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পাঠদান শুরু করার যে নির্দেশনা রয়েছে সেটি আমরা বাস্তাবায়নের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছি। আরও যেসব করণীয় রয়েছে সেগুলো নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের জন্য খুব শিগগিরই আমরা শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করবো। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আমরা ক্লাস রুমগুলোতে এক বেঞ্চ পর পর শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করবো। তবে মাস্ক ছাড়া কাউকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের প্রস্তুতি
বগুড়া সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জোহরা ওয়াহিদা রহমান জানান, তার কলেজের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ আগে থেকেই পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন। পাঠদান কার্যক্রমে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু অনুদান পাওয়া গেছে। এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনা হবে এবং ১২ সেপ্টেম্বর থেকে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য একটি হেল্প ডেস্ক চালুরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনাকালে ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থীরা যাতে খুব সহজেই কর্মচারীদের চিনে তাদের সহযোগিতা নিতে পারেন সেজন্য প্রত্যেক কর্মচারীকে পরিচয়পত্র প্রদানের কথা জানিয়ে প্রফেসর জোহরা ওয়াহিদা রহমান বলেন, ক্লাসরুম গুলোতে এক বেঞ্চ পর পর শিক্ষার্থীদের বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে পাঠদান প্রক্রিয়াটি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চুড়ান্ত করা হবে। এজন্য শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করা হবে।
বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ
বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, তাদের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ৪টি স্থানে হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ১২ সেপ্টেম্বরের আগেই তারা কলেজের প্রধান ফটকের দুই পাশে ৬টি করে আরও ১২টি বেসিন স্থাপন করবেন। তিনি বলেন, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট এবং রেডক্রিসেন্টের কলেজ ইউনিটের সদস্যদের দ্বারা তারা শিক্ষার্থীদের মাঝে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করবেন।