এস.এম অলিউল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
মানুষ এতটা স্বার্থপর ও নিচে নামতে পারে এমনটা কখনো পূর্বে কেউ রুপকথায় শুনেনি,ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর ০৭নং ওয়ার্ডের বেপারী বাড়ি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মৃত শাহজাহান বেপারী তার স্ত্রী সাথে বনিবনা না হওয়ায় এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে তাকে তালাক প্রদান করেন। মাতৃহারা সংসারের আর্থিক অনটন দূর করতে একমাত্র ছেলে এরশাদ ৭ বছর বয়সে মাত্র ১৪ কেজি ওজনে উঠের "জকিম্যান" হিসেবে পাড়ি দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দীর্ঘদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পেশায় কাজ করে জমিজমা ও ভিটেবাড়ি করার পর বাড়িতে এসে পাশ্ববর্তী গ্রামের মাহমুদা নাম একজনকে বিয়ে করেন, বর্তমানে তার ৩ মেয়ে ২ ছেলে রয়েছে।
শাহজাহান বেপারী এরশাদের মাকে ছেড়ে দেয়ার পর দ্বিতীয় বিবাহ করলে ৩ ছেলে ৪ মেয়ে জন্ম হয়। মৃত্যুর পূর্বে তিনি মানবিক দিক বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে মৌখিক ওছিয়ত করে এরশাদের নামে ভিটাবাড়ির মাঠের জমি থেকে ৩৩ শতাংশ, বিলের জমি থেকে ৩৩ শতাংশ এবং সৎভাইদের সাথে যেন বসত ভিটার জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব না হয় সেই জন্য বসত ভিটা করার জন্য ১৩ শতাংশ যা বর্তমানে ৫১১৩ দাগে রেকর্ডে ৯ শতাংশ রয়েছে তা দেয়। তাছাড়াও বাকী সব সম্পত্তি পৈত্রিক সূত্রে সমান ভাগে মালিক হবে বলে উল্লেখ্য করে যায়। এমনকি ঐ মৌখিক ওছিয়তে শাহজাহান বেপারী তার চাচাতো বোন কাঞ্চন বেগম থেকে ক্রয় করা সাড়ে ৫ শতাংশ জায়গাও সকল সন্তান সমান ভাগ পাবে বলে উল্লেখ্য করেন।
উল্লেখ্য শাহজাহান বেপারী মৃত্যুর পূর্বে ঋণগ্রস্ত হলে এরশাদকে দেয়া ভিটাবাড়ির মাঠের ৩৩ শতাংশ জমি ১৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেন। এবং তার চাচাতো বোনের কাছ থেকে ক্রয় করা সাড়ে পাঁচ শতাংশ জায়গা দলিল করার পূর্বে তিনি মারা যায়।
ওছিয়ত করার সময় উপস্থিত থাকা জাহাঙ্গীর খন্দকার, মিজান মিয়া,নোয়াব মিয়া সহ একাধিক ব্যক্তি জানান,আমরা ওছিয়তের সময় উপস্থিত ছিলাম, শাহজাহান বেপারী আমাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আমাদের সামনে ওয়াছিত করে এরশাদকে ভিটাবাড়ি মাঠের জমি,বিলের জমি,এবং বর্তমানে থাকা বসত বাড়ির জায়গা দিয়ে গেছে। শুধু তাই নয় এই এরশাদের কামানো টাকা দিয়ে তার ভাইদের বিদেশ পাঠানো সহ পরিবারে স্বচ্ছতা ফিরে আসে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার বাবার ক্রয় করা সাড়ে পাঁচ শতাংশ জায়গা গোপনে তার সৎভাইয়েরা দলিল করে নেয়।
এবিষয়ে এরশাদ প্রবাসে থাকায় তার স্ত্রী মাহমুদা জানান, এরশাদের সৎভাই হক মিয়া, বাছির মিয়া,বাবু মিয়া গোপনে তার পিতার ক্রয় করা সাড়ে পাঁচ শতাংশ জায়গা ফুফু কাঞ্চন বেগমের ওয়ারিশদের কাছ থেকে দলিল করে নেয়। শুধু তাই নয় বর্তমানে আমাদের বসত বাড়ির পাশে থাকা সরকারি খাল যাতে পানি চলাচলের জন্য বর্তমান সরকার ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মানিক পুলিশের বাড়ির পাশে কালভার্ট নির্মাণ করে দেয়, সে খালের জায়গা অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ভরাট করতে গিয়ে আমার আমাদের বাড়ির জায়গাও জবরদখল করার পায়তারা করছে।
সরকারি খাল ও এরশাদের জায়গা ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে হক মিয়া গংদের একজন বাবু মিয়া ভরাটের বিষয়টি অস্বীকার করে একেক সময় একেক কথা বলেন।
এবিষয়ে সাফাই গাইতে আসা শাহজাহান বেপারীর দ্বিতীয় স্ত্রীর বলেন,আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তার ঋন পরিশোধ করার জন্য কিছু সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে, সাড়ে পাঁচ শতাংশ জায়গা আমার ছেলেরা তার ফুফুর ওয়ারিশদের নিকট থেকে ক্রয় করেছে। এখন যে জায়গা ও খাল ভরাট করা হচ্ছে তা গ্রামের পাঁচজন বসে সিদ্ধান্ত দেয়ার পর ভরাট করছি।
সরকারি খাস জায়গা দখলের বিষয়ে ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন ভূমিকর্মকর্তা শাহ আলম কে প্রাথমিকভাবে অবগত করলে তিনি তৎক্ষনাৎ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং কেউ যেন সরকারি জায়গা দখল না করেন সেই ব্যাপারি হুশিয়ার করে যায়।
সরকারি খাস জায়গা দখলদারদের বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে নবীনগর সহকারী কমিশন( ভূমি) মোশারফ হোসাইন কে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,আমার নায়েব ঘটনাস্থলে গিয়ে ভরাটের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে, যদি পরবর্তীতে ভরাট করার চেষ্টা করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নিব।