নরসিংদীতে পৌর নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নির্বাচনের আমেজ
আশরাফুল ইসলাম সবুজ (নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি)
নির্বাচনের দিন-তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে, নেতাদের তৎপরতাও বাড়ছে দিন দিন। এরই মধ্যে পৌরসভা নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন নেতারা।
মাঠ পর্যায়ে পুরোদমে জনসংযোগের পাশাপাশি নিজ দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতা ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের নেতা, জেলার মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলার সদ্য নিযুক্ত সভাপতি(ভারপ্রাপ্ত) ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) সহ জেলা-উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আর প্রার্থীদের বিশ্বাস, দলীয় ছায়া থাকলেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া প্রায় ৫০ ভাগ নিশ্চিত। আর বাকি ৫০ ভাগ নিজের ইমেজ ও জনমত দিয়ে পার পেয়ে যাবেন তারা। কেবল নির্বাচনী রাজনীতি নয়, স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দলীয় রাজনীতিতেও শুরু হয়েছে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ। দলের প্রভাব ধরে রাখতে সরব হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে বিএনপি। এখনো পর্যন্ত তাদের দলের কেউ মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা বা প্রচারণা প্রকাশ্যে শুরু করে্ননি।
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা দিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। পোস্টার-ফেষ্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। প্রার্থীদের কর্মীরা সামাজিক মাধ্যমে গুলোতে চালাচ্ছেন ব্যাপক প্রচারণা। জেলার ছয়টি পৌরসভার মধ্যে একটিতে সীমানা সংক্রান্ত মামলা আছে।
সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোতে দেখা দিয়েছে নির্বাচনের আমেজ। মেয়র ও কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা পুরোদমে জনসংযোগে নেমে পড়েছেন। বিভিন্ন হাট বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শোভা পাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার ও বিলবোর্ড।
বাংলার ম্যানচেস্টার বলে খ্যাত এক হাজার ১৩৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমা থেকে ১৯৮৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় নরসিংদী জেলা। জেলার সর্বপ্রথম ঘোষিত পৌরসভার নাম নরসিংদী। ১৯৭২ সালে ১০.৩২ বর্গ কি. মি. আয়তন বিশিষ্ট ৩৩ টি মহল্লা নিয়ে গঠিত হয় নরসিংদী পৌরসভাটি। ১৯৯৬ সালে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হওয়া ছাড়া চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো উন্নয়নই লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না।
পরবর্তীতে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ২০০৪ সালে এ পৌরসভায় নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘদিনের এই অবহেলিত পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পান। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার মাত্র আট মাসের মাথায় ২০১১ সালের ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তিনি। পরে তার ভাই কামরুজ্জামান কামরুল এই পৌরসভায় তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন এবং চার পাঁচ বছর পৌরসভায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী নির্বাচনে দল থেকে আবার মনোনয়ন নিয়ে তিনি মোট নয় বছরে একাধারে চালিয়ে আসছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেনঃ
বর্তমান মেয়র ও নরসিংদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম কাইয়ূম, নরসিংদী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোন্তাজ উদ্দীন ভূঁঞা, বর্তমান প্যানেল মেয়র ও নরসিংদী জেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের সাবেক আহবায়ক মোঃ রিপন সরকার, নরসিংদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চু, শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকার, নরসিংদী শহর আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জামান।
তবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোনো কোনো প্রার্থীর নাম শুনা গেলেও তা দৃশ্যমান নয়।
বর্তমান মেয়র কামরুল গত ২ নির্বাচনে তার ভাই লোকমান হোসেনের ইমেজ ছাড়াও নিজের কর্মকাণ্ডে্র মাধ্যমে পৌরবাসীর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন বলে দাবি করছেন তিনি ও তার সমর্থকরা। করোনা মহামারীতে তার কাজ ও সমগ্র জেলাব্যাপী ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহের ব্যাপারটা দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট হিসেব করলে আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বর্তমান মেয়রের প্রায় নিশ্চিত। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি- সাঃ সম্পাদক, জেলার একমাত্র মন্ত্রী এবং জেলার ৫ সাংসদের ৩জনই তার পক্ষে।
অন্যদিকে স্থানীয় সাংসদের সাথে বিরোধ চরমে থাকায় এবং সদর আসনের সাংসদের গ্রুপটিও এমূহুর্তে একেবারে নিষ্ক্রিয় নয়। সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা এস এম কাইয়ূম গত নির্বাচনে বর্তমান মেয়রের সাথে নির্বাচন করায়, তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে নির্বাচনে তিনি মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতি না করলে, কাইয়ূম বিজয়ী হতেন, এমনটাই দাবি তার সমর্থকদের।
এদিকে গত নির্বাচনে মোন্তাজ উদ্দীন ভূঁঞা ও আশরাফ হোসেন সরকার প্রার্থী থাকলেও দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেননি তারা। এছাড়াও মোঃ রিপন সরকারও রয়েছেন, বিশাল কর্মী-সমর্থক নিয়ে। তিনি বর্তমান সাংসদের বিশেষ পছন্দের তালিকায় রয়েছেন বলে জানা যায়। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই প্রার্থীরা সবাই একাট্ট হয়েছেন।