সাজিদুল করিম, নাটোর জেলা প্রতিনিধিঃ
লকডাউনে সাধারন যাত্রি নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে নাটোরে পুলিশ বিভাগের লোগোযুক্ত একটি টেলিকম গাড়ি আটক করা হয়। নাটোর শহরের চকরামপুর এলাকা থেকে ওই টেলিকম কোষ্টারটি আটক করা হয়। এসময় ওই কোষ্টারে ঢাকাগামী প্রায় ৪০ জন যাত্রি ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শি ও কোষ্টারের যাত্রি সুত্রে জানা যায়, পুলিশ বিভাগের লোগোযুক্ত নম্বরবিহীন ওই কোষ্টার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থেকে ঢাকায়ফেরার পথে তাতে যাত্রি ওঠানো হয়। যাত্রিদের অধিংকাংশ ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী। যাত্রিদের অভিযোগ, পুলিশের গাড়ি রাস্তায় আটকাবে না বলে বেশি ভাড়া নিয়ে গাদাগাদি করে লোক তুলেছে।
আমেনা বেগম,রুনা বেগম ও হোসেন আলীসহ গাড়ির কয়েকজন যাত্রি জানান, নাচোল শ্যামলী কাউন্টারের মাষ্টার চালকের সাথে কথা বলে তাদের এ গাড়িতে তুলে দিয়েছে। আমাদের সামনে ওই মাষ্টার তাদের স্যারের সাথে কথা বলেছে। পুলিশের গাড়ি রাস্তায় আটকাবে না বলে বেশি ভাড়া আদায় করে গাদাগাদি করে লোক তুলেছে তারা। নিরাপদে যাওয়ার কথা বলে তাদের কাছে থেকে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। কোষ্টারটি ২৬ সিটের হলেও তাতে প্রায় ৪০ জন যাত্রি ওঠানো হয়।
এদিকে পুলিশের ওই টেলিকম কোষ্টার গাড়িটি ঢাকায় যাওয়ার পথে নাটোর শহর অতিক্রম করার সময় চকরামপুর এলাকায় পাথরবোঝাই একটি ট্রাকের সাথে লেগে পুলিশ টেলিকমের কোষ্টারটির লুকিং গ্লাস ভেঙ্গে যায় । গ্লাস ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে ট্রাকচালক তোরাব আলী ও হেলপার কাসেমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন কোষ্টার চালক ফিরোজ হাসান। এসময় প্রত্যক্ষদর্শি এক যুবক জরুরী সেবা ৯৯৯ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে নাটোর থানা পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয় এবং গাড়িটি আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
কোষ্টার চালক ফিরোজ হাসান জানান, ঢাকার রাজারবাগ থেকে সাতজন পুলিশ অফিসারকে সরকারী কোষ্টার চাঁপাই নবাবগঞ্জে নামিয়ে দেন। ফেরার পথে পুলিশ টেলিকম এন্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বরত ওসি টান্সপোর্ট রেজাউল করিমের নির্দেশে চাঁপাই নবাবগঞ্জ শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে নাচোল থেকে কয়েকজন গার্মেন্টস কর্মী যাত্রী নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হন। কত টাকা ভাড়া মিটিয়েছে তা ওসি স্যার জানে ।
সম্পর্ণ অনিয়ম হলেও রেজাউল স্যার সরকারি গাড়িতে লোক তুলে আনতে বলেছে । স্যারের হকুমে এই কাজ করেছে সে। গাড়িটি পুলিশ বিভাগের সরকারি গাড়ি। এটি ঢাকায় সরকারি কাজে ব্যবহার হয়। তবে ট্রাক চালকের কাছে টাকা দাবির অভিযোগ সঠিক নয়। লুকিং গ্লাস ভেঙ্গে ফেলা নিয়ে ট্রাক চালক ও হেলপারের সাথে বাক বিতন্ডা হয়েছে মাত্র।
এসময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় এক গণমাধ্যম কর্মী ওই কোষ্টার চালক ফিরোজ হাসানের মাধ্যমে ওসি টান্সপোর্ট রেজাউল করিমের সাথে কথা বললে, গাড়িটি পুলিশ বিভাগের সরকারি গাড়ি। তবে লকডাউন হওয়ার কারণে সাতজন পুলিশ অফিসারকে ঢাকা থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জে নামিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। চালক যাত্রী তুলে নিজে বাঁচার জন্য আমার কথা বলেছে। এটি অনিয়ম হয়েছে। পরে এই প্রতিবেদক ওসি টান্সপোর্ট রেজাউল করিমের সাথে তার মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি মিটিংয়ে রয়েছেন বলে জানান। তবে ঘটনার সাথে তিনি কোন ভাবেই জড়িত নন বা এধরনের কোন নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ মিত্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারী ওই গাড়িতে যাত্রি ওঠানোর বিষয়টি প্রমানিত। ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। পরে সকল যাত্রিকে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটি ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।