নারীর সাথে কাউন্সিলর প্রার্থীর নগ্ন ছবি ফাঁস, সর্বত্র সমালোচনা
বরিশাল প্রতিনিধিঃ
আগামীকাল সোমবার ২৮ ডিসেম্বর জেলার উজিরপুর পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের মতো ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে এখানকার ভোটারদের মধ্যে ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উজিরপুর পৌরসভার এ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সাথে নির্বাচনে মেয়র পদে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৩ জন প্রার্থীসহ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের ৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদের ২৪ জন প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা-গণসংযোগ-ভোট প্রার্থনাসহ সকল প্রস্তুতি শেষ করেছেন। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। এরইমধ্যে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহণকারী পাঞ্জাবি প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মোঃ খবির উদ্দিনের দুটি আপত্তিকর অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। নিজ দলীয় বিবাহিত ওই নারী নেত্রীর সাথে কাউন্সিলর প্রার্থী খবিরের আপত্তিকর এমন ছবি নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তার নির্বাচনী এলাকাসহ গোটা পৌর এলাকার ছোট থেকে বৃদ্ধ বয়সীদের মাঝে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনার ঝড়। সূত্রে জানা গেছে, নারী নেত্রীর সাথে কাউন্সিলর প্রার্থী খবিরের আপত্তিকর ওই দুটি অশ্লীল ছবি ‘Metu Moni’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়েছ। ছবি দুটির একটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অশ্লীল পোশাক পরিহিত ওই নারী নেত্রীর বুকের ওপরে মাথা রেখে উপজেলার চিহ্নিত চাঁদাবাজ খবির বিবস্ত্র অবস্থায় শুয়ে আছে এবং অপর ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে অর্ধনগ্ন ওই নেত্রীর একটি স্তন্য নগ্ন অবস্থায় পান করছেন দুশ্চরিত্র এই কাউন্সিলর প্রার্থী খবির উদ্দিন। গত ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৩১ মিনিটে ‘Metu Moni’ নামের ওই আইডি থেকে ছবি দুটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে,“একজন পৌরসভার কাউন্সিলর প্রার্থীর চরিত্র দেখুন। ইনি জনাব খবির হাওলাদার উজিরপুর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। তাহার ঘরে সুন্দরী বউ এবং বাচ্চা থাকা সত্বেও একটা নষ্ট মেয়ের সাথে কি করতেছে তা তো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। এই ধরনের চরিত্র নিয়ে সে যদি ওয়ার্ড কাউন্সিলর হয় তাহলে এলাকার যুবতী মেয়ে এবং মহিলাদের সম্ভ্রম নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে কি? তাই ৯ নং ওয়ার্ডের জনগণের কাছে প্রশ্ন রাখছি এই চরিত্রহীন লোককে আপনাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে কি কাউন্সিলর নির্বাচন করতে চান? এলাকাবাসী এই চরিত্রহীন ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যান করুন। আমার ফেসবুক বন্ধুদের কাছে আমি ছোট্ট একটি অনুরোধ জানাচ্ছি দয়া করে সবাই এই পোস্টটি একটু শেয়ার করবেন প্লিজ।” এদিকে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহণকারী পাঞ্জাবি প্রতীকের প্রার্থী খবিরের নারী কেলেঙ্কারির মতো এমন ঘটনা ফাঁসে ভোটের লড়াইয়ে তার অনাকাঙ্খিত পরাজয়ে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। সমালোচিত এই কাউন্সিলর প্রার্থী খবির উদ্দিনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন পূর্বেও তিনি উপজেলা আ’লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু নিজ দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে গোটা উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে তিনি একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। তার বিরুদ্ধে উজিরপুর সেটেলমেন্ট অফিস, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রী অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া একাধিক অসহায় ও নিরীহ পরিবারের জমিজমা দখল করে ভূমিদস্যু হিসেবেও বেশ কু-খ্যাতি অর্জন করেছেন। এক কথায় গোটা উপজেলায় মূর্তিমান এক আতঙ্ক এই নারীলোভী খবির উদ্দিন। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৭ জুন উজিরপুর মডেল থানার পুলিশ উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের তেরদ্রোন গ্রামে অভিযান চালিয়ে তালিকাভুক্ত মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান (৩২) ও তাঁর সহযোগী মো. আসাদ হাওলাদারকে (২৮) যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি নাইন এমএম পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, একটি গুলি ও ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে। সে সময় পুলিশ আটক ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এই কাউন্সিলর প্রার্থী খবির উদ্দিন ও তার সেল্টারদাতা শ্রমিকলীগ নেতা শিপন মোল্লাকে আটক করে। ওই ঘটনায় তৎকালীন সময়ে উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোজাহিদ বাদী হয়ে অস্ত্র ও মাদক আইনে উজিরপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা করে ছিলেন। পরে আটককৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অস্ত্র-মাদক ব্যবসার প্রধান সেল্টারদাতা হিসেবে বর্তমান ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খবির উদ্দিন ও শ্রমিকলীগ নেতা শিপনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছিলো পুলিশ। সেই মামলায় দীর্ঘদিন কারাবাসের পর পুনরায় এলাকায় ফিরে আরো বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে খবির-শিপন জোট। তবে বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবাসের পর কিভাবে এবং কোন অদৃশ্য শক্তির দৌরাত্ম্যে এই অস্ত্রবাজ খবির-শিপন ওই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে পুনরায় এলাকায় এসে অস্ত্রধারী সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছে। চলমান পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভিযোগ উঠেছে, ইতোমধ্যে পাঞ্জাবি প্রতীকের প্রার্থী খবির উদ্দিন তার নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মহড়া দিচ্ছেন। এমনকি গভীর রাতে নিরীহ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। তবে এ সকল অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ৯নং ওয়ার্যের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী খবির উদ্দিনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।