মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
এখানে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উন্নতমানের আলু বীজ উৎপাদন করা হয়।
বাংলাদেশের এটি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৮ সালে মৃত্তিকা সংরক্ষণ প্রকল্প নামে ৫২০ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করা হয়েছে। পরবর্তীতে ৫০ একর জমিতে গম গবেষণা কেন্দ্র দেওয়া হয়। বর্তমানে বাসস্থান ও আবাদযোগ্য জমিসহ এই প্রতিষ্ঠানটির জমির পরিমান ৪৭০ একর।
১৯৭৬ সালে এটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮১ সালে এখানে আলু বীজ উৎপাদন কর্মসূচি চালু করেন
প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জানা যায়, আবহাওয়াগত দিক থেকে বীজ আলুর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য এটিই বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট স্থান। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রধানত আলুর প্রজনন বীজ উপাদন করে থাকে। এছাড়াও এখানে কন্দাল ফসল, মসলা ফসল ও বিভিন্ন ফলের জাত উদ্ভাবন, উৎপাদন প্রযুক্তি, সার ব্যবস্থাপনা, রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার উপর বিভিন্ন ধরনের গবেষণা হয়ে থাকে।
আলু বীজের পাশাপাশি এখানে আলুর ভিত্তি বীজ ও প্রকৃত বীজ এবং গমের ভিত্তি বীজ উৎপাদন করা হয়। বীজ বিভিন্ন এনজিও, বীজ উৎপাদনকারী সংস্থা ও কৃষকদেরকে সরবরাহ করা হয়। আয়তনে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষি খামার।
এখানে বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের কৃষি গবেষণায় বেশ কিছু ধারাবাহিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। হাইব্রিডাইজেশনের মাধ্যমে আলুর উচ্চ ফলনশীল ১০টি জাত উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
জাতগুলো হলো, বারি আলু-৩৫, বারি আলু-৩৬, বারি আলু-৩৭, বারি আলু- ৪০, বারি বলু-৪১, বারি আলু-৪৮, বারি আলু-৫৬, বারি আলু-৫৭, বারি আলু-৬২, বারি আলু-৬৩।
এসব আলু বীজ ব্যবহারের ফলে মাঠ পর্যায়ে ফলন অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়াও এখান থেকে বারি লিচু-৪ জাতটি অবমুক্ত করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় একটি প্রতিষ্ঠান। যেহেতু বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং কৃষি এ দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেহেতু কৃষিক্ষেত্রে ফসল গবেষণায়, উন্নত জাতের বীজ উদপাদনে এই প্রতিষ্ঠানটির উপর সরকারের বিশেষ গুরুত্বারোপ প্রয়োজন।
এই গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। বিশেষত কন্দাল ফসলের উন্নতমানের বীজ উৎপাদন। বীজের গুণগত মান ভালো হলে ফলন ভালো হবে। সমৃদ্ধ হবে দেশের কৃষিখাত, সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।
গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠান প্রধান ড. মো. মহি উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এখানে গবেষণার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে বলে জানা যায় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মীর সংকট রয়েছে অনেক। নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। পর্যাপ্ত শ্রমিকের ব্যবস্থা করা গেলে এই কেন্দ্রের সমস্ত আবাদযোগ্য জমি চাষাবাদের আওতায় আনা যাবে। এতে করে প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়বে এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
তিনি আরও বলেন, এখানে যন্ত্রপাতি রাখার প্রয়োজনীয় ইমপ্লিমেন্ট সেট নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থানের জন্য পর্যাপ্ত ভবন নেই। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত এতগুলো মানুষের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য এখানে একটি বিদ্যালয় নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার জন্য কোন হাসপাতাল নেই। গবেষণা ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নেট হাউজ এবং ওয়ারিং সেটের অভাব রয়েছে।
এছাড়াও আলুর জন্য প্রয়োজনীয় হারভেষ্টার ও কোল্ড ষ্টোরেজ নেই। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নেই জেনারেটর। এতো সীমাবদ্ধতার পরেও সরকারের কার্যকর পদক্ষেপে প্রতিষ্ঠানটি দেশের জন্য একটি বহৎ সম্ভমনাময় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটিকে ‘কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলে এখানে দেশের অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীগণ কাজ করার সুযোগ পাবেন। ফলে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে এ দেশে একটি সফল কৃষি বিপ্লব ঘটবে। ফলে দেশ ও জাতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটি কৃষিক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং কৃষি এ দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেহেতু কৃষিক্ষেত্রে ফসল গবেষণায়, উন্নত জাতের বীজ উৎপাদনে এই প্রতিষ্ঠানটির উপর সরকারের বিশেষ গুরুত্বারোপ প্রয়োজন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। বিশেষত কন্দাল ফসলের উন্নতমানের বীজ উৎপাদন। বীজের গুণগত মান ভালো হলে ফলন ভালো হবে। সমৃদ্ধ হবে দেশের কৃষিখাত, সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।
Leave a Reply