পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি ঃপটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় (গত-২২-অক্টোবর-২০২০ ইং) তারিখ লালুয়া ইউনিয়নের নাওয়াপাড়া গ্রামের জনৈক আমিনুল ইসলাম গাজী @ দীলিপ গাজী (৫০), পিতা-মৃত দৌলত হোসেন গাজী এর নিজ বসত ঘরের বিছানার উপর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে প্রেরণ করেন কলাপাড়া থানার পুলিশ। এব্যাপারে মৃতের স্ত্রী হাবিবা বেগম বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েক জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার (মামলা নং-২৭, তাং- ২২-১০-২০২০ ইং), মামলাটি ধারা-৪৫৭/৩০২/৩৪ পিসি রুজু হয়।
উক্ত এজাহারের ভিত্তিতে, পটুয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান পিপিএম এর সার্বিক তদারকি ও নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শেখ বিল্লাল হোসেন এর নেতৃত্বে পটুয়াখালী জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের নিমিত্তে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ শুরু করে।
এবিষয়ে পটুয়াখালী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শেখ বিল্লাল হোসেন জানান, (গত ২৪-অক্টোবর-২০২০ ইং) তারিখ আনুমানিক দুপুর ১.০০ টার সময় বরগুনা জেলার সদর থানাধীন হেউলিবুনিয়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে মোঃ আমজেদ (৫৫), পিতা-মৃত মোঃ ছাহেদালি কে গ্রেফতার করা হয়। তার তথ্য মতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ঐ দিন আনুমানিক রাত ০৯.১৫ মিনিটের সময় আমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নিজাম @ মিজান (৪৫), পিতা-ফজলে করিম, সাং-গুলিশাখালী, থানা-আমতলী জেলা-বরগুনাকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ তাদের দেয়া তথ্য মতে পটুয়াখালী পৌরসভাস্থ ছোট চৌরাস্তা থেকে ( ২৫-অক্টোবর- ২০২০ ইং) তারিখ ০৩:৩০ মিনিটের সময় মোঃ আনোয়ার হোসেন প্যাদা (৫৫),(ভিকটিমের শ্বশুর), পিতা-মৃত হাতেম আলী প্যাদা, সাং-মাছুয়াখালী (ইউপি-ধানখালী) থানা-কলাপাড়া, জেলা-পটুয়াখালীকে গ্রেফতার করা হয়।
এব্যাপারে জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে (২৫-অক্টোবর-২০২০ ইং) তারিখ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান (পিপিএম) বলেন,গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, নিহত আমিনুল ইসলাম গাজী, গ্রেফতারকৃত আনোয়ার প্যাদার মেয়ে জামাই। তাদের ঘরে ০২ (দুই) কন্যা ও ০১ (এক) পুত্র রয়েছে। ভিকটিম একজন সাবেক ইউপি সদস্য এবং তিনি দীর্ঘদিন কাতারে ছিলেন। তার পৈত্রিক সূত্রে অনেক জমিজমা রয়েছে। কিছু জমি পায়রা বন্দর কর্তৃক অধিগ্রহন হওয়ায় ক্ষতিপূরণ বাবদ বড় অংকের টাকা পেয়েছেন। এবং শ্বশুরের সাথে যৌথভাবে কিছু জমি কিনেছিলেন যা অধিগ্রহন হওয়ার পর শ্বশুর নিজেই সকল টাকা উত্তোলন করে নেয়। এ বিষয় নিয়ে শ্বশুরের সাথে তার মনোমালিন্য হলে, স্ত্রী এবং মানসিক ভাবে অসুস্থ্য বড় মেয়ের চিকিৎসার খরচ না দেয়ার কারনে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গত ঈদ-উল-আযহার পর স্ত্রী হাবিবা ০৩(তিন) সন্তানকে বাপের বাড়ি চলে যান। ভিকটিমের ব্যাংক হিসাবের নমিনী বড় মেয়ে বলে জানা যায়। এসপি আরও জানান, ভিকটিমের শ্বশুর আনোয়ার প্যাদা জমি কেনা-বিক্রির মধ্যস্থতা তথা দালালি করে। সে চিন্তা করে, তার মেয়ে জামাই দীলিপ গাজী মারা গেলে তার ব্যাংকে রক্ষিত অর্থের মালিক হবে তার নাতনি।এক পর্যায়ে শ্বশুর আনোয়ার প্যাদা মেয়ে জামাই দীলিপ গাজীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে এবং ভাড়াটিয়ে খুনি খুজতে বিষয়টি তার আপন ভাইয়ের মেয়ে জামাই নিজাম @ মিজানকে জানায়। নিজামের নামে ডাকাতি সহ বরগুনা জেলার আমতলী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। নিজাম চাচা শ্বশুর আনোয়ার প্যাদার কথায় রাজি হয়ে বরগুনা আমজেদকে ভাড়া করে। এরপর থেকে তারা একে অপরকে ধর্মের ভাই বলে পরিচয় দেয়। আনোয়ার প্যাদা এবং নিজাম একাধিকবার বিভিন্নস্থানে শলাপরামর্শ করে। আনুমানিক দুই মাস পূর্বে আমতলী ফেরীঘাটে বসে ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ) টাকার বিনিময়ে নিজাম ও আমজেদ মিলে দীলিপ গাজীকে হত্যা করার বিষয়ে আনোয়ার প্যাদার সাথে চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী আনোয়ার প্যাদা বিভিন্ন সময়ে অল্প অল্প করে নিজামের কাছে ১,৬০,০০০/- (এক লক্ষ ষাট হাজার) টাকা প্রদান করে যা নিজাম ও আমজেদ মিলে ভাগ করে নেয়। টাকা নিয়েও কাজ না করায় আনোয়ার প্যাদা তাদের দুইজনকে চাপ দিতে থাকে।
ঘটনার দিন (গত ২১-অক্টোবর-২০২০ ইং) তারিখ রাতে আমজেদ ছয়টি ঘুমের বড়ি কিনে গুড়া করে একটি প্লাস্টিকের ছোট বোতলে ভরে নিয়ে বাড়ি থেকে আমতলীতে এসে ফেরীঘাটে নিজামের সাথে মিলিত হয়। সেখান থেকে বাসে কলাপাড়ায় নেমে অটো রিক্সা যোগে বালিয়াতলী খেয়া পার হয়ে তারা বানতি বাজারে যায়। তখন তারা আনোয়ার প্যাদার কাছ থেকে পটুয়াখালী পৌরসভাস্থ কলাতলা বাজারের একটি বিকাশের দোকান থেকে বানতি বাজারের একটি বিকাশের দোকানে ১০,০০০/-(দশ হাজার) টাকা নেয়।পরে আমিনুলের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করে।এক পর্যায়ে নিজাম গোপনে সেভেনআপের বোতলে ঘুমের ট্যাবলেটের গুড়া মিশিয়ে কৌশলে আমিনুল গাজীকে খাইয়ে অচেতন করে। নিজাম বিছানায় থাকা একটি পাতলা কাঁথা দিয়ে তার নাখ, মুখ ও গলা চেপে ধরে এবং আমজেদ পা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়।ওই রাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারা ঘর থেকে বের হয়ে উত্তর লালুয়া- চিংগুড়িয়া খেয়াঘাট পার হয়। এ সময় আমজেদ পূনরায় ভিকটিমের শ্বশুর আনোয়ার প্যাদাকে ফোন করে বাকী ত্রিশ হাজার টাকা নিতে আমতলী আসে। আনোয়ার প্যাদা ২০,০০০/-(বিশ হাজার) টাকা নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে পটুয়াখালী থেকে আমতলী এসে তাদের কাছে টাকা হস্তান্তর করে। নিজাম ও আমজেদ টাকা ভাগ করে নিয়ে যে যার গন্তব্যে চলে যায়।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।