হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃ
যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ একুশে গানের রচয়িতা, ভাষা সৈনিক ও প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী স্মরণে জুন ৫, ২০২২ এ একটি আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল শোক সভা আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক এবং যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড.নুরুান নবী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদুল্লাহ l
ডঃ নুরান নবী তাঁর জীবনে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর স্মৃতি স্মরণ করে তাঁকে একজন বিশিষ্ট বন্ধু এবং অভিভাবক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিঁনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন “বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু" বইয়ের প্রকাশনায় প্রয়াত আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বিশেষ ভূমিকার কথা। তিঁনি উল্লেখ করেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ কর্তৃক “পলাশী থেকে ধানমন্ডি” বই অবলম্বনে ছায়াচিত্রের স্পন্সরশিপের কথা। খবর বাপসনিউজ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনপ্রিয় কবি আসাদ চৌধুরী শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আব্দুল গাফফার চৌধুরীর জীবনের বিশেষ দিকগুলো তুলে ধরেন। তিঁনি বলেন বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন সময়ে চাপের মুখে অথবা প্রলোভনের কাছে নীতির সাথে আপোষ করেছেন শুধু ব্যাতিক্রম ছিলেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তিঁনি ছিলেন নির্লোভ, নিরহংকারী এবং বাঙালী জাতির আত্মমর্যাদার প্রশ্নে আপোষহীন।
বিশেষ অতিথি প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদুল্লাহ আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে বাঙালী জাতির জাগ্রত বিবেক বলে অভিহিত করেন। তাঁর সাথে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ৬১ বছরের বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে জনবরেণ্য প্রয়াত এই সাংবাদিকের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা উল্লেখ করে।
যুবিশেষ অতিথি ক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সম্মানিত উপদেষ্টা এম এ সালাম বলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে প্রয়াত আব্দুল গাফফার চৌধুরী ছিলেন আপোষহীন। লন্ডন থেকে যুক্তইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান সাংবাদিক মকিস মনসুর আব্দুল গাফফার চৌধুরীর সাথে তাঁর জীবনের স্মরণীয় দিকগুলো তুলে ধরে তিঁনি আব্দুল গাফফার চৌধুরী ফাউন্ডেশন করার প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত বরিশাল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব আহমেদ তাঁর বক্তব্যে তাঁর পিতা, বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমদের সাথে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সভার সঞ্চালক যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা হাসান মাহমুদ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবসের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত এই স্মরণ সভায় ছয় দফা আন্দোলনের সূচনাতে বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য প্রয়াত আব্দুল গাফফার চৌধুরীর অবিস্মরণীয় অবদানের কথা তুলে ধরেন এবং আব্দুল গাফফার চৌধুরী ফাউন্ডেশন ও মরহুমের প্রয়াত কন্যা বিনীতার নামে লাইব্রেরি গঠনে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ বৃহত্তর ওয়াশিংটনের সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক দস্তগীর জাহাঙ্গীর। তিঁনি তাঁর বক্তব্যে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর সাথে লন্ডনে দেখা হওয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন যে কিংবদন্তীতুল্য এই মানুষটির প্রতি সত্যিকার অর্থে সন্মান জানানো হবে যদি বর্তমান প্রজন্ম তাঁর আদর্শকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতিবৃন্দ ফাহিম রেজা নূর, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, এবং রাফায়েত চৌধুরী, ও পরিষদের উপদেষ্টা মোফাজ্জাল হোসেন। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে সংযুক্ত ছিলেন বোস্টন থেকে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতি সফেদা বসু বিন্দু, মিশিগান বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আহাদ আহমদ, ক্যালিফোর্নিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি নজরুল আলম, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুব বিষয়ক সম্পাদক আরেফীন চৌধরী প্রমুখ।
সভায় সীতাকুণ্ডে অগ্নিকান্ডে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং অসুস্থদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়। সভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়ার জন্য বিএনপি জামাতের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এবং দেশে ও প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সকল নেতা কর্মীদের দেশ বিরোধী সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানানো হয়। মরহুম আব্দুল গাফফার চৌধরীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্মরণ সভার সভাপতি ড,নূরুন নবী।