মির্জা সাইদুল ইসলাম (সাঈদ)
স্টাফ রিপোর্টার,দৈনিক বিজয়ের বানী।
টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার যাদবপুর, হাতিবান্ধা ও দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের
লাঙ্গুলিয়া, চাকলা পাড়া, কৈয়ামধু দক্ষিণ অঞ্চল, যাদবপুর,পাহাড় কাঞ্চনপুর, বোয়ালী পশ্চিমপাড়া, দেওবাড়ি,কাঙ্গালীছেও, বাজাইল, পানাউল্লাপাড়া সহ সখিপুর-ঢাকা অভিমুখের সড়কটির পূর্ব ও পশ্চিমের প্রায় ২৫ টি গ্রামের লক্ষাধিক প্রান্তিক মানুষ উপজেলা শহরে দৈনন্দিন প্রয়োজনে যাতায়াত করে থাকে। লাল মাটির এসব অঞ্চলের বেশির ভাগ সড়ক গুলি কাঁচা হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়।
বিশেষ করে পশ্চিম বোয়ালী-নাকশালা লাঙ্গুলিয়া বাজার-আকন্দপাড়া, পূর্ব বোয়ালী- কালিদাস, দক্ষিণ কৈয়ামধু-আবাদি বাজার, কন্ঠুমার্কেট-কলাবাগান মাদ্রাসা, জসিম বাজার-কামালিয়াচালা বাজার, লাঙ্গুলিয়া বটতলা- এয়ারফোর্স বাজার, রতনপুর-জসিম বাজার সহ বেশ কয়েকটি রাস্তায় চলাচলরত মানুষের ভোগান্তি এবারের বর্ষায় চরমে পৌঁছে গেছে।
গ্রামাঞ্চল হলেও এসব রাস্তা গুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে- ড্রাগন, আমরূপালী,চায়না থ্রি লিচু সহ অসংখ্য ফলের বাগান। গড়ে উঠেছে পোল্ট্রি ফার্ম, গরু মোটাতাজা করণ ও দুগ্ধখামার আরও রয়েছে অনেক মৎস প্রজেক্ট। রয়েছে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা সহ অজস্র শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়া এ সব এলাকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষি নির্ভর। ধান,পাট, শর্ষে, আদা, হলুদ, মরিচ সহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল, ফল ও শাকসবজির চাষের মাধ্যমে জীবীকা নির্বাহ করে থাকে। প্রান্তিক এলাকার বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থী,ধর্মপ্রাণ মানুষ ক্রেতা- বিক্রেতা ও স্থানীয় এলাকাবাসী সকলেরই এ সকল কাঁচা রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। পেশাগত কারণ বা জীবন জীবিকার অন্বেষনে কর্দমাক্ত হয়েও চলতে হয় এসব এলাকায় দায়িত্বরত মানুষ গুলোকে। এছাড়া কৃষিজাত ফসল, ক্ষুদ্র ও বহৎ খামারিরা তাদের অতি পরিশ্রমে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শীত ও বসন্তের শুকনো মৌসুমে এসব কাঁচা সড়কে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা এলেই এসব এলাকা হয়ে উঠে এক অবর্ণনীয় কষ্টের অভয়ারণ্য। বিশেষ করে মুমূর্ষু,পঙ্গু রোগী ও প্রসূতি মায়েদের জন্য এসব রাস্তা মারাত্মক বিপদজনক হয়ে পরে যার ফলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার কারণে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকায় থাকে এসব প্রান্তিক জনগণ।
এই সড়কে চলাচলকারীদের বর্ষা মৌসুমে জুতা পায়ে হেঁটে যাওয়া স্বপ্ন। জীবন ও জীবিকার তাগিদে তাদেরকে কাদা-মাটিতে পায়ে হেটে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হচ্ছে। সড়কটিতে ছোট-বড় অসংখ্য নালা আকৃতির খানাখন্দ ও বেশি পরিমাণ কাদা হাওয়াই বিশেষ প্রয়োজনে বাহন হিসেবে ঘোড়া ও গরুর গাড়ি ব্যতিত অন্য সকল যানবাহন যেমন ভ্যান, মোটর ভ্যান, অটো, সাইকেল, মোটর সাইকেল ও সিএনজিসহ সকল যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ।
একাধিক গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন আসলে স্থানীয় একাধিক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সড়ক গুলো পাকা করণের বহুবার প্রতিশ্রুতি দিলেও বছরের পর বছর এ ভাবেই চলে গেছে, আবার নির্বাচন এসেছে , আবার প্রতিশ্রুতি পয়েছি। এরপর যুগের পর যুগ চলে গেলও আমার তাদের প্রতিশ্রুতির আশানুরূপ কোনো বাস্তবায়ন হতে দেখিনি।
এ বিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা যারা এই এলাকায় বসবাস করি বর্ষাকালে একপ্রকার বন্দী জীবন পার করতে হয়, একজন রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়াটাযে কতটা দুষ্কর হয়ে পরে তা বলে বঝানোর মতো নয়। গাড়ি তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে যাওয়ারও কোনো উপায় থাকেনা। উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে গিয়ে ব্যাপক নাজেহাল হতে হয় এই এলাকার কৃষক ও ছোট খামারিদের তাছাড়া বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের ন্যায্যমূল্য পায়না থেকে ফলে তাদের প্রতিবারই ভারী হচ্ছে তাদের লোকসানের বোঝা। আমাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে যাওয়ার কথা বললে রাস্তার কারণে তারাও যেতে চায়না। এই বিপদ থেকে আমাদের রক্ষার্থে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ওই সকল এলাকার কিছু মানুষের ভাষ্য, নূরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, মুজিবুর সিকদার, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন অনেকেই জানান, ছেলে-মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠালে তারাও যেতে চায় না। কোনো রোগী বা গর্ভবতী মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে, রিক্সা ভ্যান নিয়ে যাবার কোনো উপায় নেই। অজানা বিপদের আশংকা আমাদের এই বর্ষাকালে প্রতি মুহুর্তে তার করে বেড়ায়। যেন কোন জরুরী রোগী বা বিশেষ কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে গরু বা ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোন বাহন পাওয়ার উপায় থাকেনা। আমরা এ সব সড়ক গুলো অনতিবিলম্বে পাকাকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।
সরেজমিন ঘুরে, এসব এলাকার রাস্তা গুলোর বিষয় নিয়ে কথা হয়, টাংগাইল ৮ বাসাইল সখিপুরের মাননীয় সাংসদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা এড.জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপি মহোদয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন ইতোমধ্যেই বেশ কিছু নতুন রাস্তা পাকাকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে আরও বেশ কিছু রাস্তার উন্মোচন করেছি যা পাকাকরণ এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাকি রাস্তা গুলোও পর্যায়ক্রমে অবশ্যই পাকাকরণের আওতায় আনা হবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন ইতিপূর্বে কোন সাংসদরাই এই অবহেলিত দক্ষিণ অঞ্চল গুলোর দিকে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাননি। বিধায় আমার সময়ে এসে সেই সকল রাস্তা,ব্রিজ, কালভার্ট সহ স্কুল কলেজ, মসজিদ,মন্দির, মাদ্রাসা গুলোর যাবতীয় সমস্যা পর্যায়ক্রমে সমাধানের লক্ষ্যে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।
জানতে চাইলে সখিপুর উপজেলা প্রকৌশলী হাসান ইবনে মিজান বলেন, বোয়ালী টু নাকশালা সড়কটি সহ উপজেলার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পাকা করণের জন্য টাঙ্গাইলে তালিকা প্রনয়ণ করা হয়েছে। একনেকের অনুমোদন তালিকা হাতে পেলেই সড়কগুলি কতোদিনের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবো বলে আশা করছি।