কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ-
মানুষ গড়ার কারিগর, দীর্ঘদিনের স্কুল শিক্ষক, সরকারি চাকুরীরত থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া গৌরীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার খুর্শিদ আলীর কবরের পাশে বাঁধ দিয়ে হিংসাত্মকভাবে পানি আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের গৌরীনগর গ্রামে।
গৌরীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার খুর্শিদ আলী মারা যান ১৯৯৫ সালের ৪ অক্টোবর। পরে তাঁকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শিক্ষক পরিবারের কেউ মারা গেলে সেখানেই দাফন করা হয়। কিন্তু, এই কবরের সামনে কোনো প্রকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে নিজের বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা দিয়ে দেন ইসমাইল আলী। পরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলে সেখানে পানি জমা শুরু করে। পানি জমা জায়গায় কবর সহ ইমাম উদ্দিন, সমসুদ্দিন ও নুরুজ্জামানের প্রায় ৪০শতক জমি রয়েছে। শুধুমাত্র এই রাস্তা দেওয়ার কারণে রাস্তার দক্ষিণ পাশে কবর সহ ৪০ শতক কৃষির আওতাভুক্ত জমি পানির নিচে রয়েছে, যেখানের পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জায়গায় কৃষিকাজ করা হয়েছে।
এই জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ইসমাইল আলী প্রবাসে থাকায় উনার স্ত্রীকে তারা বললে তিনি বলেন, আমি মহিলা মানুষ। আমার স্বামী আর কয়েকমাস পর বিদেশ থেকে আসলে তারপর উনি পানি সরিয়ে স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাশনের একটা ব্যবস্থা করে দিবেন। তদুপরি ইসমাইল আলী দেশে আসার অপেক্ষায় ছিলেন মাষ্টার খুর্শিদ আলীর পরিবারবর্গ । গত জুন মাসে ইসমাইল আলী দেশে আসলে উনাকে এবিষয়ে অবগত করেন তারা। ইসমাইল আলী তাদের শান্তনা দেন যে, আমি এটার একটা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিন্তু, ইসমাইল আলী দিচ্ছি দিচ্ছি বলে এভাবে চলে যায় প্রায় ২মাস সময়। তারপরও তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কোনো হদিস ছিলো না৷ পরে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) পঞ্চায়েতের সালিশে এবিষয়ে কথা তুলেন মাষ্টারপুত্র কুতুব উদ্দিন। তখন ইসমাইল আলী বলেন যে, রাস্তা আমি বানিয়েছি। আমি কারো কবর না বাড়ি ডুবে গেলেও পানি যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করে দিতে পারবো না। তখন পঞ্চায়েতের মুরব্বিরা ফয়সালা দেন যে, যেহেতু সে(ইসমাইল আলী) পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না, কি আর করার তোমরা তোমাদের জায়গা দিয়ে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও। তখন শনিবার(৭ আগস্ট) মাষ্টার খুর্শিদ আলীর পরিবারবর্গরা মিলে নিজ জায়গা দিয়ে পানি যাওয়ার সাময়িক একটা ব্যবস্থা করে দেন, যাতে তাদের পারিবারিক কবরস্থান এই জলাবদ্ধতা থেকে শুকায় এবং তাদের পরিবারের কেউ মারা গেলে যেন দাফন করতে পারেন।
এই পানি ছাড়াকে কেন্দ্র করে মনের ক্ষোভে মেটাতে হয়রানি মূলোক হিংসাত্মক ভাবে ইসমাইল আলীর স্ত্রী পিয়ারা বেগম কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন মাষ্টার খুর্শিদ আলী'র পরিবারবর্গের উপর৷ যেখানে অভিযোগের বাদী অভিযোগ করেন, তার শ্বশুর হাজী আব্দুস সালাম(১০৭) মসজিদে নামাজ পড়তে যান এই রাস্তা দিয়ে এবং এই জায়গা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় উনার অসুবিধে হয়৷ কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে আব্দুস সালাম মসজিদে যাওয়া তো দূরের কথা, অন্যজনের সহায়তা ছাড়া খাট থেকে নামতে পারেন না।
তারপর অভিযোগের তদন্ত করতে আসেন কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই আনোয়ার। তখন তিনি সহ ওয়ার্ড সদস্য সোহেল বলেন, যেদিকে পানি যাওয়ার জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, সেদিকে যেন বিবাদী পক্ষ পাইপ দিয়ে দেয়। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে অস্থায়ীভাবে যেদিকে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, সেদিকে পড়ে আব্বাস উদ্দিনের জমি, যেটায় বছরখানেক পরে তিনি বাড়ি তৈরি করবেন। অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, পানি সরাসরি নিষ্কাশনের জন্য ইসমাইল আলীর করা রাস্তার পার্শ্ব দিয়ে খাল রয়েছে। শুধুমাত্র রাস্তার নিচ দিয়ে প্রয়োজন একটি পাইপ। এটি না করে উনি চাইছেন অন্যজনের জমির উপর দিয়ে বর্তমানে পাইপ দিতে।
মাষ্টার খুর্শিদ আলীর বড় ছেলে কুতুব উদ্দিন বলেন, 'ইসমাইল আলীর রাস্তার ব্যারিকেডের কারণে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান পানির নিচে প্লাবিত হয়। পঞ্চায়েতের সালিশে এবিষয়ে আলোচনা করি। তারপর তারাও এব্যাপারে ব্যর্থ হয়ে আমাকে আমার নিজ জায়গা দিয়ে সাময়িকভাবে পানি ছাড়ার অনুমতি দেন৷ পরে আমি আমার জায়গা দিয়ে পানি ছাড়লে আমাদেরকে হয়রানি করার জন্য উনার স্ত্রী ও বাবা থানায় অভিযোগ করেন। আমাদের কবরস্থান যদি পানির নিচে থাকে, তাহলে আমাদের কেউ মারা গেলে তাকে কোথায় দাফন করবো?
ইসমাইল আলীর ছোটভাই মুহিবুর রহমান বলেন, 'রাস্তার পানি ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাস্তার পাশে একটা খাল রয়েছে, যেটার পানি সহজে হাওরে গিয়ে পড়ে। আমি আমার সাইটে দিয়ে রাস্তার নিচ দিক থেকে পাইপ দিয়ে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেই কিন্তু আমার বড়ভাই(ইসমাইল আলী) তা দিতে নারাজ। যদি উনিও আমার মতো পাইপ দিয়ে দিতেন, তাহলে আর ঝামেলা হতো না'।
ইসমাইল আলীর বাবা হাজী আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'রাস্তা পাকা করার আগে পাশের খালের সাথে রাস্তার নিচ দিয়ে পাইপ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভুলে সেটা দেওয়া হয় নি। আমার ছোট ছেলে মুহিবুর রহমানের সাথে বড় ছেলের বিরোধের কারণে রাস্তায় পাইপ দেয়নি বড় ছেলে (ইসমাইল আলী)। আমি থানায় যেতে চাই নি। আমাকে জোর করে আইন উল্লাহ ও পিয়ারা বেগম থানায় নিয়ে গিয়েছে। তারা আমার ছোট ছেলের নামে জোরপূর্বক মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে আমাকে দিয়ে'।
এব্যাপারে ওয়ার্ড সদস্য সোহেল আহমদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোন দিলে উনি ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেন।