প্রথমবারের মতো মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে ভিড়েছে মালবাহী ভেনাস ট্রায়াম্প
শেখ দিদারুল ইসলাম চৌধুরী
বিশেষ প্রতিনিদি
পরীক্ষামূলকভাবে উন্নত চ্যানেলের মাধ্যমে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের জেটিতে ভিড়েছে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘ভেনাস ট্রাইয়াম্প’।
আজ মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার সময় জাহাজটি উপজেলার মাতারবাড়ী জেটিতে নোঙর করে।
এরপর গভীর সাগর থেকে জাহাজটি চালিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অস্থায়ীভাবে নির্মিত জেটিতে নেন বন্দরের পাইলটরা।
জাপানী কনস্ট্রাকশন কোম্পানি জাহাজটিতে নিয়ে আসছে এ প্রকল্পের মালামাল। জাহাজটিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কর্মকর্তারা মাতারবাড়ীতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মাতারবাড়ী কোলপাওয়ার কর্মকর্মতা স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রবেশপথে এ জন্য ছয়টি বয়া (নির্দেশক) বসানো হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ১৬ মিটার ড্রাফট ও ২৫০ মিটার চওড়া একটি চ্যানেলও। বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে চ্যানেলে প্রবেশ করে মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়ছে জাহাজটি। কাশিমা ও নিগাতা নামে জাপানের দুটি বন্দরের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে মাতারবাড়ীর এই গভীর সমুদ্রবন্দর। ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে দুই ধাপে। প্রকল্পটির কাজ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনই তাতে অস্থায়ীভাবে নোঙর করছে বড় জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন সাড়ে ৯ মিটারের অধিক গভীরতার কোনো জাহাজ নোঙর করতে পারে না। কিন্তু এই গভীর সমুদ্রবন্দরে ভিড়তে পারবে ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজও।
মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের কাজ চলার মধ্যেই সেখানে ভিড়তে যাচ্ছে বিদেশি জাহাজ। এটি একটি জেনারেল কার্গো শিপ। এর ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতা) সাড়ে পাঁচ মিটার। পানামার পতাকাবাহী এই জাহাজটি নির্মিত হয়েছে ২০০৯ সালে। এটি ১২০ মিটার লম্বা ও নয় হাজার ৬৮০ টন ওজন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন।
দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ১২শ’ মেগাওয়াট মাতারবাড়ী সুপার-ক্রিটিকেল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। পরীক্ষামূলকভাবে সরাসরি মালবাহী মাদার ভেসেল নোঙর করা বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বিশেষ মাইলফলক’ হিসেবে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন বাস্তবানুগ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকার দেশে প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করেছে, আর এ মাসের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বর্তমান সরকার সময় সাপেক্ষ, বাস্তবসম্মত ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে গত ১১ বছরে ১৮ হাজার ৬০৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১১৩টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে।
বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার ৫৪৮ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে এবং দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ পূর্বকোণকে জানান, জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প। মাতারবাড়ীতে প্রথমে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য কৃত্রিম চ্যানেল খনন করে। আজ এই মাদার ভেসেল নোঙরের মাধ্যমে নতুন দিগন্ত সুচনা করলো বাংলাদেশ। ২০২৫ সাল নাগাত সম্পূর্নরুপে প্রস্তুত হবে এই সমুদ্রবন্দর।
উল্লেখ্য,গত ২২ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার ‘পেলাভুবন সিলেগন’ বন্দর থেকে মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ নিয়ে উপজেলার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের দিকে রওনা দিয়েছে এই জাহাজটি। জাহাজটির পানির নিচের অংশের গভীরতা (ড্রাফট) সাড়ে পাঁচ মিটার।
‘ভেনাস ট্রায়াম্প’ নামের জাহাজটি জেনারেল কার্গো শিপ। ২০০৯ সালে জাহাজটি নির্মিত হয়েছে। এটি ১২০ মিটার লম্বা ও নয় হাজার ৬৮০ টন ওজন ক্ষমতাসম্পন্ন।