প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাস
ডা. মো: সাইফুল আলমঃ Nipah প্যারামিক্সো গ্রুপের একটি RNA ভাইরাস। বন্য প্রাণী থেকে মানব শরীরে প্রবেশ করতে পারে বলে একে Zoonotic Virus ও বলা হয়ে থাকে। ভাইরাসটি দিনে দিনে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে সংক্রমণের ‘সহজ স্ট্রেইন’ তৈরি করে ফেলতে পারে। সারা দেশেই বাদুড় উড়ে বেড়ায়, তাই এ ভাইরাসের সংক্রমণ নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার নিপাহ গ্রামে প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া যায়, এ কারণেই এই ভাইরাসের নাম নিপাহ।
নিপাহ ভাইরাস প্রধানত বাদুর জাতীয় প্রাণী থেকেই ছড়ায়। বিশেষ করে আক্রান্ত বাদুড় যদি খেজুর রসে মুখ দেয়, সেখানে থেকে রসের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে। বাতাসের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমণ সম্ভব নয়। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসে বা এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোন পাখির খাওয়া ফল খায়, তখনই এই ভাইরাসের সংক্রমণ সম্ভব।
নিপা ভাইসারের আক্রমণে মৃত্যুর আশঙ্কা শতকরা ৭০ শতাংশ। সাধারণভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব বা বমি করা, জ্বর এবং মাথা যন্ত্রণা ও ঝিমুনি। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ৩–১৪ দিনের মধ্যে এই উপসর্গ শুরু হয় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের প্রাথমিক পর্যায়ে এনকেফেলাইটিসের শিকার হতে হয়।যার ফলে খিঁচুনি, উচ্চ জ্বর হতে পারে।এতে করেই রোগীড় মৃত্যু হতে পারে।তাই এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন।
এই রোগে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ হাজার গুণ উত্তম।এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় এবং আক্রান্ত মানুষের লালা, হাঁচি, কাশি থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।
১. বাদুর নিপাহ ভাইরাস বহন করে বিধায় কাঁচা খেজুরের রস পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. বাদুরে কাটা আংশিক ফল খাওয়া যাবে না।
৩. যত দ্রুত সম্ভব ভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
৪. রোগীর বিছানা আলাদা করে দিতে হবে। সেখানে বসা অথবা ঘুমানো যাবে না।
৫. রোগীর কফ এবং থুথু মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে।
৬. রোগীর পরিচর্যাকারীকে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিপাহ ভাইরাস বাংলাদেশ-ভারতের ঘনবসতি অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছরই দেখা দেয়। প্রাণঘাতী রোগটির প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় ১৮ জন আক্রান্ত হন নিপাহ ভাইরাসে। তার মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন। বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ৭০ শতাংশেরও বেশি। ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় প্রথম নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তারপর থেকে প্রতিবছরই কম-বেশি নিপাহ আক্রান্ত রোগী দেখা গেছে। আইইডিসিআর-এর তথ্যানুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৯ জন। মারা গেছেন ২২৫ জন।
ডা. মো: সাইফুল আলম
এম.ডি. (রুদেন ইউনিভার্সিটি)
মস্কো, রাশিয়া।