নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
অভিযুক্ত আইনজীবী আবুল সানিয়াত (রাশেল)। তিনি শহরের চরকমলাপুর এলাকার বাসিন্দা ও ফরিদপুর জজ কোটের আইনজীবী । তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও সোলেনামা পরিবর্তন করে জমি আত্মসাদের অভিযোগ করেন, তার চাচাতো ভাই কানাডা প্রবাসী, আবুল কাশেম। জানা যায়, ফরিদপুর শহরের ১১৬নং কমলাপুর মৌজার এস.এ. ১৩৭৩ নং খতিয়ানে লিখিত ১৭৪ নং দাগের ৫৫ শতাংশ জমি (যার আনুমানিক বাজার দর প্রায় ১০ কোটি টাকা) । যা বর্তমানে এ্যাডভোকেট আবুল সানিয়াত (রাসেল) জবর- দখল করে, বাউন্ডারী ওয়াল নির্মানের পায়তারা করছেন।দেয়াল নির্মাণাকালীন সময় অন্যপক্ষ বাঁধা দিলে ফরিদপুর পৌর মেয়রের সিদ্ধান্তে নির্মানকাজ বন্ধ রাখা হয়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই দুই চাচাতো ভাইয়ের দাদা আছিরউদ্দিন মুন্সি ৫ ছেলে রেখে মারা যান। এর মধ্যেমৃত মৌলভি আব্দুল হামিদের সন্তান আবুল কাশেম গং এবং মৃত আব্দুল রশিদের সন্তান এ্যাডভোকেট আবুল সানিয়াত (রাসেল) গং।তাদের দাদা আছিরউদ্দিন ফরিদপুর সদর ও নগরকান্দা উপজেলায় অনেক সম্পত্তি রেখে যান।
এদের মধ্যে আছিরউদ্দিন মুন্সির তিন ছেলের ওয়ারিসগণ নগরকান্দা উপজেলার বিলনালিয়া, কানাইর প্রভৃতি মৌজার জমি পারিবারিক ও মৌখিক আপষ বন্টণের মাধ্যমে ভোগ দখল করে আসছেন। এবং অন্য দুই ছেলে মৌলভি আব্দুল হামিদ ও আব্দুলরশিদ এর ওয়ারিশগণ ফরিদপুর সদর উপজেলার কমলাপুর, চর টেপুরাকান্দি,চরমাধবদিয়ার মৌজার জমি প্রতি দাগে- দাগে সমান ভাগে ভোগ দখল করে আসছেন। পরবর্তীতে বিএস রেকর্ডে নগরকান্দা এবং ফরিদপুর সদরের সব মৌজার জমির কিছু অংশ আছিরউদ্দিন এর ৫ ছেলে ও বাকি অংশ ছেলেদের ওয়ারিশগণের নামে রেকর্ড হয়। এরপর জমিগুলো ভোগ দখল, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান ও বেঁচা-বিক্রির সুবিধর জন্য ২০১১ সালে, সোলেনামা করে সম্পত্তি বন্টণ করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যার মধ্যে অন্যান্য জমিসহ চরকমলাপুর এলাকার ৫৫ শতাংশ জমির মধ্যে ২৭.৫ শতাংশ আবুল কাশেম গং (যার পৌর হোল্ডিং নং- ২০) বাকি ২৭.৫ শতাংশ আবুল সানিয়াত (রাসেল) গং (যার পৌর হোল্ডিং নং-২১) এর মধ্যে সোলেনামায় সিদ্ধান্ত হয়। এই সোলেনামার কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য তাদের চাচাতো ভাই এ্যাডভোকেট আবুল সানিয়াত (রাসেল) কে দায়িত্ব দেয়া হয়।
এই সুযোগে সিরাজুল হক গংদের বাদী সাজিয়ে ১৬৫/২০১১ মাললা দায়ের করে এ্যাডভোকেট রাশেল এবং উকিল নিযুক্ত করেন তার সিনিয়র মরহুম এ্যাড. মহসিন মিয়াকে। এবং বিবাদী পক্ষের উকিল হন তিনি নিজেই। তৎকালীন সময়ে এই দুজন একই চেম্বারে কর্মরত ছিলেন। এইসুযোগে এ্যাডভোকেট আবুল সানিয়াত (রাসেল)সোলেনামার প্রথম পাতা এবং শেষের পাতায় পক্ষগণের স্বাক্ষর করে নেন। কিন্তু মাঝের কোনো পাতায় পক্ষগণের স্বাক্ষর না নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নেন। এবং সুযোগ মতো দুজন মিলে যোগসাজসে সোলেনামার দুটি পাতা পরিবর্তন করে উল্লেখিত বাড়ীর সমস্ত সম্পত্তি এ্যাডভোকেট আবুল সানিয়াত( রাসেল)জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের নামে ডিক্রি করে নেয়৷ এছাড়া আবুল কাশেমের ভাগ্নি শাহিনা চৌধুরী এবং মমতা চৌধুরী বৈধ ওয়ারিশ হওয়া স্বত্বেও তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে তারা ফরিদপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী মামলা করেন, যার নং- ৩৫৯/২০১১। জানা যায়, এই সোলেনামা করার জন্য বাদী পক্ষের হয়ে কোর্টে স্বাক্ষী দেন তাদের চাচাতো ভাই সিরাজুল হক।
তবে, অনুসন্ধানকালে যোগাযোগ করা হলে সিরাজুল হক স্বীকার করেন, চর কমলাপুরের ঐ বাড়িটির সম্পূর্ণ অংশ (৫৫ শতাংশ) এ্যাডভোকেট আবুল সানিয়াত রাসেল গংদের দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কানাডা প্রবাসী আবুল কাশেম অভিযোগ করে বলেন, চর কমলাপুরের ৫৫ শতাংশ জমি আমাদের এবং রাসেলদের মধ্যে সমহারের।কিন্তু এখন সে একা দখল করে নেয় কিভাবে? এ বিষয়ে ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক খলিফার ভাষ্য, ঐ জমিতে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ কাজ বন্ধরয়েছে। এবং এ বিষয়ে ফরিদপুর পৌর মেয়র নোটিশের মাধ্যমে ও মৌখিকভাবে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একাধিকবার সালিশ বসলেও সেখানে সিদ্ধান্ত হয়নি । আবুল কাশেম বলেন সব কিছু সোলেনামা করে বন্টণ করা হয়েছিল। এই সোলেনামায় চতুরতা করে প্রথম পাতায় এবং শেষের পাতায় আমাদের স্বাক্ষর নেয়। কিন্তু এর প্রতিটি পাতায় স্বাক্ষরের নিয়ম রয়েছে। পরবর্তীতে মাঝখানের দুটি পৃষ্টা পরিবর্তন করে ওদের নামে করে নিয়েছে। এ বিষয় যোগাযোগ করা হলে আবুল সানিয়াত (রাশেল) বলেন, আমি বিষয়টি সমাধান করে দিবো। তবে, তার দাবি সোলেনামা পরিবর্তন করা হয়নি ।