রতন ইনতিসার,বকশীগঞ্জ(জামালপুর)প্রতিনিধি ॥
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলা প্রায় দুই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষক হামিদুর রহমান শেফালী মফিজ মহিলা আলিম মাদ্রাসার এবতেদায়ী প্রধান। তিনি বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোর ইউনিয়নের মধ্যপলাশতলা গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। প্রতারক হামিদুর রহমানের বিচার দাবি করেছেন প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়,বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোর ইউনিয়নের মধ্যপলাশতলা গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে হামিদুর রহমান ২০১৯ সালে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এবং সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছে থেকে ৫ থেকে ৮ হাজার করে টাকা নেন। পরে তাদের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয়পত্র ও সনদপত্রও দেন তিনি। “ঘরে ঘরে জাগ্রত করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এমন স্লোগান সংবলিত ৭১ এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ এর ব্যানারে একটি করে ভুয়া সার্টিফিকেট দেন প্রতারক হামিদুর রহমান। কিন্তু এসব সনদ যাচাই করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন, এগুলো আসলে ভুয়া। এরপর তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিলে হামিদুর রহমান নানা ভাবে টালবাহানা শুরু করেন। এমনকি ভুক্তভোগীদের মামলা হামলার ভয়ভীতি দেখান। এই ঘটনায় একাধিকবার গ্রাম্য শালিস বৈঠক হলেও কোন শালিস বৈঠক হলেও টাকা ফেরত দেননি হামিদুর। গত এক সপ্তাহ আগে নাশকতা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। হামিদুর রহমান নাশকতা মামলায় বর্তমানে জামালপুর জেল হাজতে রয়েছেন। এছাড়াও হামিদুরের বিরুদ্ধে অন্যের জমি জোরপূর্বক দখল করারও অভিযোগ রয়েছে। গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে হামিদুরের বিরুদ্ধে প্রতারণার শিকার ইসমাইল হোসেন,হাসমত আলী,খলিলুর রহমান,জমিলা বেগম ও আবেদন বেগমসহ অনেকের অভিযোগ করেন।
প্রতারণার শিকার হাছেন আলী বলেন,সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে হামিদুর আমার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নেয়। সে বলেছিল সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হলে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে সরকারি ভাতা পাবেন। কিন্তু কোনো সুবিধা পাচ্ছিই না। এখন বুঝতে পারছি সে প্রতারণা করছে। যে সার্টিফিকেট দিয়েছে সেটা ভুয়া। তাই হামিদুরের প্রতারণার বিচার চাই।
প্রতারণার শিকার মো. আবদুস সামাদ বলেন,সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে মাসে মাসে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে হামিদুর আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেয়। আমি ছাগল বেচেঁ তাকে টাকা দেই। পরে জানতে পারি সে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। এখন সে টাকাও ফেরত দিচ্ছেনা। আমরা তার শাস্তি চাই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,হামিদুর আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।তার বেয়াই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি থাকার কারনে তিনি দাপট দেখিয়ে চলতেন। অন্যের জমি দখল ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে প্রায় ২ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই হামিদুর। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক হয়েও মানুষের সাথে প্রতারনা করেছেন তিনি। তাকে আইনের আওতায় আনার জোড় দাবি জানান তারা।
হামিদুর রহমান কারাগারে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আফসার আলী বলেন, একটা প্রতারক চক্র সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আসলে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বলতে কিছু নেই। যারা প্রতারণা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ জানান,এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রতন ইনতিসার
বকশীগঞ্জ,জামালপুর
01950184022