বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
দ্বাদশ তীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের প্রথম দিনে বাদ পড়েছেন ১১ জন প্রার্থী। বাতিলদের মধ্যে শুধু এক আসনেই আছেন সাতজন। যাদের পাঁচজনেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের কার্যালয়ে এই মনোনয়ন যাচাইবাছাই হয়। এদিন বগুড়া- ১, ২, ৩ ও ৪ আসনের প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই করেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
যাচাইয়ে শুরুতে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থী মো. ইবনে সাফি বিন হাবিবের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে তার নামে ঋণ খেলাপ থাকার কারণে মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনটিতে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন ১২ জন। একজন বাতিল হওয়ায় প্রার্থীতা থাকলো ১১ জনের।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনেও একই দল এনপিপির প্রার্থী মো. ইউনুস আলীর মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর স্বাক্ষর নিজেই করেন এই প্রার্থী। এ আসনে ১১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। একজন বাতিল হওয়ায় প্রার্থীতা থাকে ১০ জনের। তবে নৌকার মাঝি তৌহিদুর রহমান মানিক আয়কর অর্থ জমা দেয়া সংক্রান্ত নথি না থাকায় স্থগিত রাখা আছে। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী বজলুর রহমান না আসায় তার মনোনয়ন স্থগিত করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনে ১৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাইকালে সাত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অজয় কুমার সরকারে বিরুদ্ধে ক্রেডিটকার্ডের ঋণখেলাপীর অভিযোগ রয়েছে। যা তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
এছাড়াও এ আসনটি বাদ পড়েছেন নৌকার প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিয়ষক সম্পাদক খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী। মনোনয়নপত্রে দেয়া তার তথ্যে এক শতাংশ সমর্থনযুক্ত ভোটারের সাক্ষরের তথ্য সঠিক না হওয়ায় তাকে বাতিল করা হয়।
একইভাবে সমর্থনযুক্ত ভোটারের স্বাক্ষরের তথ্যে ভুল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এরশাদুল হক টুলু, আওয়ামী লীগের সমর্থক ডঃ জামিলুর রশিদ তালুকদার, বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ, দুপচাঁচিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজাল হোসেন এবং জাতীয় পার্টির থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র জাকারিয়া হোসেনের মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে বাদ পড়েন আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল আলম হোসেন ওরফে হিরো আলম। মনোনয়নপত্র যথাযথভাবে পূরণ না করার চারটি কারণ উল্লেখ করে তার প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া এই আসনের এনপিপির প্রার্থী মনোয়ার জাহিদের মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এই প্রার্থী তার মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর স্থানে নিজেই স্বাক্ষর করেন।
আসনটির স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলামের মনোনয়নপত্রে আয়করের নথি সংযুক্ত না থাকায় সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া গোলাম মোস্তফা নামে আরেক প্রার্থীর মনোনয়নও স্থগিত রাখেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
মনোনয়ন যাচাইবাছাই শেষে বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাতিলকৃত প্রার্থীরা ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে আপিল করার সুযোগ পাবেন। তবে সেক্ষেত্রে আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আগামীকাল সোমবার বগুড়ার বাকি ৫, ৬ ও ৭ আসনের মনোনয়ন যাচাই বাছাই হবে। যাচাইবাছাই শেষে সোমবার বিকেল চারটার পর আমাদের রায়ের কপি নিয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর আপিল করতে হবে।
গত ৩০ নভেম্বর বগুড়ার সাতটি আসনে মোট ৮৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে রোববার চারটি আসনের মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ে ১১ জন বাদ পড়েছে।
বগুড়ার সাতটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ লাখ ৪ হাজার ৩২১ এবং নারী ভোটার ১৪ লাখ ২৪ হাজার ২৩ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯৬৯টি। ভোট কক্ষ স্থায়ী ৫ হাজার ৮১৫টি ও অস্থায়ী ৪০৮ টি মিলে মোট ৬ হাজার ২২৩ টি কক্ষে ভোট দিবেন জেলাবাসী।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী- রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এর মধ্যে বগুড়ায় মনোয়নপত্র বাছাইয়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ ডিসেম্বর।
প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।