কাহালু(বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার কাহালুতে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা বেপোয়ারা হয়ে উঠেছে। কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের ছুরিকাঘাত ও মারপিটে চারজন কলেজ ছাত্রসহ মোট পাঁচজন আহত হওয়ার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে কাহালু থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলাটি দায়ের করেন কিশোর গ্যাং এর ছুরিকাঘাতের শিকার কাহালু সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র সিহাবের মা মোছাঃ জেলি বেগম। মামলার বিবরণে তিনি উল্লেখ করেছেন কতিপয় বখাটে যুবক তার ছেলেকে ছুরিকাঘাত করাসহ ছেলের সহপাঠীদের মারপিট করে টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়েছে। হত্যার উদ্দেশে বখাটেরা তার ছেলেকে ও সহপাঠীদের ছুরিকাঘাত ও মারপিট করেছে।
কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের হাতে মারপিটের শিকার কলেজ ছাত্ররা, কাহালু কলেজের প্রভাষক মাকছুদুর রহমানসহ নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ব্যাক্তি জানান, বর্তমানে একটি সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং দীর্ঘদিন ধরে কাহালু রেল স্টেশন এলাকায় নানা অপরাধ মূলক কাজ করছে। বর্তমানে তারা এতই বেপোয়ারা হয়ে উঠেছে তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা। কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে গিয়ে অযৌতিকভাবে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের মারপিট করে তাদের মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়।
এমনকি স্বামী-স্ত্রী একসাথে চলাফেরা করলে তাদেরকে আটকে প্রেমিক-প্রেমিকা আখ্যা দিয়ে মারপিট করে মোবাইল ফোন টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়। আর যদি প্রেমিক/প্রেমিকা হয় তাদের আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবী করা হয়। এভাবে কাহালু স্টেশন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা না অপকর্ম করে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্টেশন এলাকায় যারা এই অপরাধ মুলক কাজ করছে তারা খুবই অল্প বয়সের ছেলেরা।
জানা গেছে গত বুধবার কলেজ ক্যাম্পাসে ও বৃহস্পতিবার কাহালু স্টেশন এলাকায় দু-দফা কিশোর গ্যাং এর ছুরিকাঘাত ও মারপিটের শিকার হন কলেজ ছাত্ররা । এই ঘটনার পর আলোচনায় আসে স্টেশন এলাকার একটি সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং এর কথা। সম্প্রতি উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এই কিশোর গ্যাং এর কথা উঠেছে বলে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন।
এদিকে কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের বেপোয়ারা আচরণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বর্তমানে তাদের সন্তানদের নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গত বৃহস্পতিবার কাহালু সরকারি কলেজ থেকে খালাতো ভাইকে নিতে এসে সাব্বির হোসেন (২৫) নামের একজন, কিশোর গ্যাং এর মারপিটের শিকার হয়ে গুরুত্বর জখম হয়েছেন।
কাহালু থানার এস আই নাজমুল হক জানান, গত আইন শৃঙ্খলা মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের কাছে একাধিকবার অনেকে মৌখিকভাবে জানালেও কেউ লিখিত কোন অভিযোগ দেননি। কয়েকদিন আগে এই ধরনের ঘটনায় আমি একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দিয়েছে। অনেক সময় এই বিষয়গুলো নিজেরাই মিমাংশা করে নেওয়ার ফলে আমাদের করার কিছু থাকেনা। এই প্রথম একটি মামলা করেছেন কলেজ ছাত্র সিহাবের মা। এই মামলাটি হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার সারারাত অভিযুক্তদের বাড়ি বাড়ি অভিযান পরিচালনা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মামলাটি নেওয়ার পর থেকে আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি সবার মধ্যে আলোচিত হওয়ায় আসামীরা টের পেয়ে পালিয়ে গেছে। এই মামলাটি খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে এবং এই ধরনের অপরাধ সাথে সংঘটিত না হয় তার জন্য পুলিশ সজাগ রয়েছে। কাহালু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড, আউয়াল হোসেন তালুকদার জানান, এই বিষয়টি নিয়ে রোববার জরুরী মিটিং করা হচ্ছে। কাহালু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ মেরিনা আফরোজ জানান, রোববার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা করা হবে।