বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শিবগঞ্জের বিভিন্ন হাটের মোকামে আলু না থাকলেও উপজেলার ১৫টি কোল্ড ষ্টোরে প্রায় ১০ লক্ষাধিক বস্তা আলু সংরক্ষণ করে গাঁ ঢাকা দিয়েছে অসাদু ব্যবসায়ী। খুচরা বিক্রেতা বলছে অধিক লাভের আশায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুর বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি প্রধান এলাকা । এ এলাকায় গত আলু মৌসুমে প্রায় ১৮ হাজার ৪শত হেক্টর জমিতে সাড়ে ৪ লক্ষ মে.টন আলু উৎপান হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছে এ বছর উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তারা প্রতি বিঘা জমিতে ১শ থেকে ১২০ মণ আলু উৎপাদন করেছেন। আলু মৌসুমে ব্যবসায়ীরা প্রতিমন আলু ৪ থেকে ৫ শত টাকা মন হিসাবে কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে তা স্থানীয় হিমাগারে সংরক্ষণ করেছে। বর্তমানে আবহাওয়ার কারণে বাজারে সবজি কম উৎপান কম হওয়ায় সাধারণ ক্রেতাগণ আলু ক্রয় করছেন। লাগামহীন বাজারে যখন সর্বস্তরের মানুষের আলু’র প্রতি ঝুঁকে পড়ে ঠিক সেই মুহুর্তে সারাদেশে আলুর দাম বৃদ্ধি পায়।
সাধারণ মানুষের কথা ভেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি আলু ৩৫-৩৬ টাকা বেঁধে দেয়। এর প্রেক্ষিতে উপজেলার কোল্ড ষ্টোরেজ কর্তৃপক্ষরা সরকারি নির্ধারিত পাইকারী বাজার প্রতি কে.জি আলু ২৬-২৭ টাকা দরে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য নোটিশ টাঙগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় আলু হিমাগারে মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির উদ্দেশ্যে গাঁ ঢাকা দিয়েছে।
ইতিমধ্যেই গত মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান উপজেলার আর এন্ড আর পটেটো কোল্ড ষ্টোরেজ (প্রাঃ) লিঃ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান চলাকালে আলু মজুদ রাখার দায়ে ৩জন কে আটক করা হয়।
শিবগঞ্জ হিমাদ্রি ম্যানেজার নূরুন্নবী বলেন, আমাদের কোল্ড ষ্টোরে সাধারণ কৃষকদের বীজ আলুর সংখ্যা বেশি। কিন্তু যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদেরকে আলু উত্তোলনের জন্য নোটিশ করা হয়েছে।
মান্নান এন্ড সন্স বীজ হিমাগার এর ম্যানেজার জামিল আহমেদ বলেন, সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ২৬-২৭ টাকা দরে আলু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য হিমাগারের বিভিন্ন স্থানে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শাহ হিমারগার লিঃ এর ম্যানেজার বিভূতি ভূষণ সরকার খোকন বলেন, ব্যবসায়ীরা আমাদের এখানে প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি করে আলু সংরক্ষণ করেছেন। আমাদের ষ্টোরে কৃষকদের বীজ আলু সংরক্ষণ রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা আলু উত্তোলন করে নিচ্ছেন। যারা বড় ব্যবসায়ীরা আলু রেখেছেন তাদেরকে দ্রুত আলু উত্তোলন করার জন্য বলা হয়েছে।
ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ৩শত ৬৭ বস্তা আলু রেখে ছিলাম। আলু উত্তোলন করেন আলু ষ্টোরের শেডে শুকানো হচ্ছে। দাম জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বাজার দরে বিক্রি করবো।
শিবগঞ্জ হাটের খুচরা বিক্রেতা শাহ আলম, আব্দুস সাত্তার, পিটু মিয়া বলেন, হাটের মোকামে আলু নেই। আমরা কোল্ড ষ্টোর থেকে আলু সংগ্রহ করে হাটে নিয়ে আসি। হিমাগারে ব্যবসায়ীরা আলু বেশী দামে বিক্রি করছেন। সরকার বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী আলু পাইকারী বাজারে ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না।