বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ-
বগুড়ার কাহালু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকা সরকারি খাস জায়গায় এখন ১০৭ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের স্বপ্নের ঠিকানা হয়েছে। এখানে উদ্ধার হওয়া মোট ৬২৩ শতক জায়গার মুল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। সরকারি এই মুল্যবান জায়গাতে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের সরকারিভাবে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে পাকা বাড়ি। উদ্ধার হওয়া জায়গাতে আরো ভূমিহীন পরিবার যাতে ঠাই পান, তার জন্যে নেওয়া হয়েছে প্রস্ততি।
সংশ্লিষ্ট সুত্রমতে কালাই ইউনিয়নের পিলকুঞ্জ ডোমপুকুর ৩০০ শতক, দূর্গাপুর ইউনিয়নের দেওগ্রাম ভোগারপুকুর ৭০ শতক, ঢেকরভিটা ১৭ শতক, হরিপুরে ৮ শতক, জীবনপুকুর ৩০ শতক, মালঞ্চা ইউনিয়নের পানিসারায় ১৭ শতক, জামগ্রাম ইউনিয়নের শান্তায় ১০ শতক, মুরইল ইউনিয়নের মহরাজায় ৬০ শতক, বড়মহর ৮ শতক, ভাগদুবড়া ৭০ শতক ও পাইকড় ইউনিয়নে ৩০ শতক সরকারি খাস জায়গা ছিলো প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে।
যুগের পর যুগ প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকা সরকারি এই সম্পত্তিগুলো অতীতে দখল মুক্ত করতে বার বার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। ইউএনও মোঃ মাছুদুর রহমান এখানে আসার পর সরকারি খাস সম্পত্তি দখল মুক্ত করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন। প্রভাবশালীদের নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সাহসিকতার সাথে তিনি উল্লেখিত পরিমান সরকারি খাস সম্পত্তি উদ্ধার করেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি মুজিববর্ষে গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে এই সম্পত্তিগুলোই কাজে লাগানো হয়েছে। উদ্ধার হওয়া সরকারি সম্পত্তিতে দু-দফায় ১০৭টি গৃহহীন পরিবারকে সরকারিভাবে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এই বাড়িগুলোর নির্মাণ ব্যায় হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা। তারমধ্যে ১৫ টি বাড়ির একেকটি’র নির্মাণ ব্যায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং বাঁকী ৯২ টি বাড়ির একেকটি’র নির্মাণ ব্যায় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। সেখানে বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। এছাড়ও স্থানীয়ভাবে প্রকল্পের মাধ্যমে লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধার্থে ইট সলিং রাস্তাও করে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ভাগদুবরায় উদ্ধার হওয়া খুবই মুল্যবান ৭০ শতক জায়গার উপর গৃহহীনদের জন্য ২৮ টি বাড়ি নির্মাণের লক্ষে মাটি ভরাটসহ আবাসন প্রকল্পের জন্য উপযোগী করা হয়েছে। গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণসহ উল্লেখিত কাজে কোন প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি যাতে না হয়, তার জন্য ইউএনও মোঃ মাছুদুর রহমান নিজে দিনরাত সমান করে তদারকি করেছেন। যারফলে বিভিন্ন জায়গায় গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও এখানে বিন্দুমাত্র সেই অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এদিকে পিলকুঞ্জ ডোমপুকুর পাড়ে আবাসন প্রকল্পে ঠাই পাওয়া বিধবা রহিমা বেগম (৬০) জানান, এই ইউএনও খুবই ভালো মানুষ। যাদের জায়গা-জমি, বাড়ি-ঘর নেই তাদেরকেই অগ্রাধিকার দিয়ে এখানে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন। নতুন বাড়ি পাওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সব-সময় দোয়া করছেন। সারিয়াকান্দির দেওভাঙ্গা কুমারপাড়া এলাকার ইউনুছ আলী (৭০)। প্রায় ২০ বছর আগে তার বাড়ি-ঘর যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ওই সময় এখানে এসে কখনো মানুষের বাড়িতে আবার কখনো ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেছেন। অবশেষে এই আবাসন প্রকল্পে তিনি পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাই পেয়ে শেষ বয়সে এসে অনেক প্রশান্তিতে আছেন।
নারহট্ট ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন তালুকদার বেলাল জানান, ইউএনও মাছুদুর রহমানের আন্তরিকতা ও সততায় এখানে আবাসন প্রকল্পের কাজ সবচেয়ে ভালোমানের হয়েছে। দূর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান খান বদের জানান, আমার ইউনিয়নে আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে ইউএনও বাড়ি নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষন করেছেন। যারফলে দূর্গাপুরসহ অত্র উপজেলায় গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণে কেউ অনিয়ম করবার সাহস পাননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাছুদুর রহমান জানান, প্রভাবশালীদের নানা প্রতিবন্ধকতা থাকার পরেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জনসাধারণের সহযোগীতায় অবৈধ দখলে থাকা সরকারি সম্পত্তি দখল মুক্ত করা হয়েছে। এই সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারের ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত স্বপ্নের গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য আবাসন সুবিধা বাস্তবায়ন খুবই সহজ হয়েছে।
Leave a Reply