মোঃ জহুরুল ইসলাম সৈকত শিবগঞ্জ, বগুড়া, প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার শিবগঞ্জে তিন ফুটফুটে প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে নুরুল ইসলাম ও মরিয়ম দম্পতির মানবেতর জীবণ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন কিছু পত্রিকায় ও মোহনা টিভিতে প্রকাশিত হয়। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর একে একে তাদের পাশে দাড়িয়েছেন জেলা পুলিশ,স্থানীয় রাজনীতিবীদ,ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অনেকেই। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। বর্তমান ঠিকানা বগুড়ার শিবগঞ্জের গুজিয়া বাজারে লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে তাদের জন্য তৈরী করে দেয়া হয়েছে মুদি দোকান। এছাড়া বগুড়ার এক ব্যবসায়ী তিন সন্তানের চিকিৎসা ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগী বিশিষ্ট সমাজ সেবক কনফিডেন্স পাবলিক স্কুলের পরিচালক শাহিনূর ইসলাম দায়িত্ব নিয়েছেন পড়া লেখার। ২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী দোকানটি উদ্বোধন করে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তা ও নতুন পোষাক তুলে দেন পরিবারটির হাতে। এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে তিন প্রতিবন্ধী শিশুর বাবা নুরুল পত্রিকার প্রতিবেদককে জানান, "ভাই আপনি হামার বাপের উপকার করলেন। আপনার জন্যই আজ কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারছি। দোয়া করি আল্লা সগলিকি (সবাইকে) ভালো রাখুক"।
নুরুল ইসলাম ও মরিয়ম দম্পতির স্থায়ী ঠিকানা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার তেকানিচুকাইনগর হলেও বর্তমান নিবাস শিবগঞ্জের গুজিয়া বাজারে । বিবাহোত্তর জীবণে তাদের ঘর আলোকিত করে একে একে জন্ম নেয়েছিলো অনন্যা(১৩) ও রায়হান কবির(১১)। কিন্তু জন্মের সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাদের দুই পা অবস হয়ে যায়। পরে আলামিন (৪) নামে আরো এক সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু জন্মের তিন মাস পার না হতেই তার মাথার আকৃতি ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে ৪ বছর বয়সি আলামিনের মাথা বিশালাকার ধারন করেছে। পা অবশ হওয়ায় অনন্যা ও রায়হান কবির মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করলেও মাঝে মাঝেই মাথার অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার ও কান্না কাটি করে শিশু আলামিন।
ছোট সন্তান আলামীনের মাথা ও ভাইবোন অন্যন্য-রায়হান কবিরের পায়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে সর্বস্ব বিক্রি করে পথে বসেছিলেন ভ্যান চালক বাবা নুরুল ইসলাম।
মা মরিয়ম বেগম জানান, হামার তিন প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে গ্রামে গ্রামে সাহায্য চেয়ে দিনপার করছি। এখন আল্লাহ মুখ তুলে চাছে হামার দিকি"। আর ভিক্ষা করতে হবেনা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ সাবু জানান, মহনা টিভির সাংবাদিক আতিক রহমান এঁর মাধ্যমে আমরা সবাই তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছি। তাদের স্বাবলম্বী করতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, তিন প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে পরিবারটির মানবেতর জীবণ যাপনের কথা জানতে পেরে আমি প্রথম থেকেই তাদের খোঁজ খবর রেখেছি। এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাড়াতে পেরে ভালো লাগছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাফিউল সরকার সাফি প্রমূখ।