মোঃ জহুরুল ইসলাম সৈকত বগুড়া, প্রতিনিধিঃ
বগুড়া সদর উপজেলার ফাঁপোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম রকি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৪ আসামী সহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।এসময় তাদের হেফাজতে থাকা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ০১ টি বিদেশী পিস্তল, ০১ টি ম্যাগাজিন, ০৩ রাউন্ড গুলি ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, গত ২৭ জুলাই ২০২১ তারিখ মঙ্গলবার রাত ৯ ঘটিকার সময় বগুড়া জেলার সদর উপজেলার ফাঁপোড় হাটখোলা জনৈক আঃ সামাদের মুদি দোকানের সামনে মসজিদে এশার নামাজ শেষে বের হওয়ার সময় একদল সন্ত্রাসী (১৫-২০ জন) মমিুনল ইসলাম রকি (৩৫) কে ধারালো অস্ত্র রামদা, ছোড়া ও চাপাতি দিয়ে পায়ে ও মাথায় কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষ আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ১০টার দিকে মমিনুল ইসলাম রকিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভিকটিম বগুড়া জেলার সদর উপজেলার ফাঁপোড় ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
এ ঘটনার পর থেকেই র্যাব-১২, বগুড়া ক্যাম্পের কয়েকটি গোয়েন্দা দল ও আভিযানিক দল হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য মাঠে নামে এবং হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে। এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, বগুড়া জেলার সদর থানার ফাঁপোড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম রকি (৩৫) হত্যার ০৪ নং আসামী মোঃ মেহেদী হাসান (১৮), পিতা-মোঃ মহসিন আলী, সাং- কৈচর, ১০নং আসামী মোঃ আরিফুর রহমান (২৮), পিতা-মোঃ আখের আলী, সাং-ফাঁপোড় এবং হত্যাকান্ডে জড়িত মোঃ আলী হাসান (২৮), পিতা-মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, সাং মালগ্রাম, মোঃ ফজলে রাব্বী (৩০), পিতা-মোঃ মাজেদ আলী, সাং কৈচর, এবং মোঃ আঃ আহাদ (২০), পিতা-মোঃ রেজাউল করিম, সাং বেলগাড়ী, সর্ব থানা ও জেলা-বগুড়াগনরা রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানা এলাকায় অবস্থান করিতেছে।
এই সংবাদের ভিত্তিতে বগুড়া র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন, (জি), বিএন এর নেতৃত্বে র্যাব-১২, বগুড়া ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল ৩১ জুলাই ২০২১ ইং তারিখ রাত ১২.৩০ ঘটিকায় অভিযান পরিচালনা করে রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানাধীন ছোট হাজিরপুর ফকিরগঞ্জ গ্রামস্থ জনৈক মোঃ রমজান (২০), পিতা রিয়াজুল ইসলাম এর বসতবাড়ী হইতে উপরোক্ত আসামীদেরকে আটক করতে সক্ষম হয় এবং উক্ত আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে বগুড়া জেলার সদর থানাধীন ফাঁপোড় উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ব দুয়ারী প্রধান ফটকের সামনে ফাঁকা জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে অদ্য ভোর ০৫.০৫ ঘটিকায় মূল আসামী মোঃ গাউছুল আজম (২৮), পিতা-মোঃ আঃ মজিদ, সাং- ফাঁপোড়, ০২নং আসামী ফুয়াদ হাসান মানিক (২৯), পিতা-মোঃ রেজাউল করিম, উভয় থানা ও জেলা-বগুড়াদ্বয়কে গ্রেফতারসহ তাদের হেফাজতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ০১ টি বিদেশী পিস্তল, ০১ টি ম্যাগাজিন, ০৩ রাউন্ড গুলি ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামীগণ দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল। ভিকটিম ধৃত আসামীদেরকে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে বাধা প্রদান করত। এ ছাড়াও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভিকটিম আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী ছিলেন। আসামীদের মনে ভয় ছিল। ভিকটিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তাদের অবৈধ কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ হবে।
এসব বিষয় নিয়ে প্রধান আসামী গাউছুল তাকে হত্যার পরিকল্পপণা করে এবং বিভিন্ন আসামীকে ডেকে একত্রিত হয়ে ভিকটিম রকির উপর আক্রমণ করে। আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ধারালো চাপাতি ও ধারালো ছোরাদ্বারা ভিকটিম রকি (৩৫) কে এলোপাতারিভাবে আঘাত করে হত্যা করে। আসামীদের ভাষ্যমতে, গাউছুলের পরিকল্পনায় এই হত্যাকান্ড হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীগণ রকি হত্যার পর থেকেই বগুড়াসহ আশেপাশের জেলার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেছিল। আসামীগণের বিরুদ্ধে এলাকার জনসাধারণের অনেক অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীগণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বগুড়া জেলার সদর থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।