মোঃ জহুরুল ইসলাম সৈকত, শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
শিউলি ঝরা শরতের মাহিন্দ্রক্ষণে বগুড়ার শিবগঞ্জে শারদীয় দুর্গোৎসবের ইমেজ বিরাজ করছে। সনাতন ধর্মাবলাম্বীদের এ বৃহত্তম উৎসবকে কেন্দ্র করে শিবগঞ্জের ৫৯টি শারদীয় দুর্গা মন্দিরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্রতিমা শিল্পীরা রং আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন দেবী দুর্গার রূপ লাবণ্য।
উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে পূজামণ্ডপগুলোকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকেছে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। পুলিশের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে সকল ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বছর শিবগঞ্জ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে ৫৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে শিবগঞ্জ পৌরসভায়-৪টি, রায়নগর ইউনিয়নে-২টি, বিহার ইউনিয়নে-৩টি, বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নে-৩টি, মাঝিহট্ট ইউনিয়নে-৩টি, পিরব ইউনিয়নে-২টি, আটমূল ইউনিয়নে-৮টি, কিচক ইউনিয়নে-৩টি, মোকামতলা ইউনিয়নে-৩টি, দেউলি ইউনিয়নে- ১০টি, ময়দানহাট্টা ইউনিয়নে-২টি, সৈয়দপুর ইউনিয়ন-৫টি ও
শিবগঞ্জ ইউনিয়ন-১১টি।
পুরোহিত প্রদীপ চক্রবর্তী জানান, দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে আগমন করে দোলায় (ফল-মড়ক) গমন করবেন।
শিবগঞ্জ ইউনিয়নের সাদুল্ল্যাপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি রঞ্জন কুমার দাস ও বুড়িগঞ্জ বন্দর সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, বৈশ্বিক করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এবারের দুর্গা পূজা অনাড়ম্বর পরিবেশে সাত্ত্বিক মতে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিমা শিল্পী হারাধন মোহন্ত বলেন, এ বছর আমি ১৬টি প্রতিমা তৈরি করেছি। প্রতিটি প্রতিমা ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা করে নিয়েছি।
উপজেলার সাদুল্ল্যাপুর এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রভাষক নয়ন সরকার বলেন, দুর্গাপূজায় আমরা সকল আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রণ করে থাকি। এমন অনুষ্ঠান ধর্মের প্রতি সবাইকে অনুগত হতে সহায়তা করে।
পূজা উদযাপনের সাথে জড়িত মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, আলোকসজ্জা, প্রতিমা তৈরী ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক মিলে প্রতিটি মন্দিরে ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ বানাইল বারোয়ারী কেন্দ্রীয় শিব মন্দিরে গিয়ে কথা হয় পূজা উদযাপন পরিষদ শিবগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সুবির কুমার দত্ত ও বানাইল বারোয়ারী শারদীয় দূর্গোৎসব পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডাঃ মোহন লাল কানুর সাথে। তারা বলেন, ১১ অক্টোবর বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয়েছে এ উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেবী দুর্গাকে বরণ করতে সকল ধরণের প্রস্তুুতি সম্পন্ন করেছে। দেবীর বোধন আমন্ত্রণ অধিবাস দিয়ে শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর সিঁদুর উৎসবের মধ্যে দিয়ে এবারের দুর্গাপূজা শেষ হবে। তবে সরকারি নিদের্শনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গনে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারা আরও বলেন, গত বছর উপজেলায় ৫৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বছর আরো ৫টি মণ্ডপ বেড়ে হয়েছে ৫৯টি। সকলের মধ্যে হিংসা ও বিভেদ ভুলতেই মা দুর্গা প্রতি বৎসর নিদিষ্ট ক্ষণে পৃথিবীতে আগমন করেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম সম্পা বলেন, শিবগঞ্জে এবার সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। সকল পূজা মণ্ডপে সরকারি নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আনসার সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ মোতায়েন থাকবে মন্দিরগুলোতে। এবছর স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের সকল নির্দেশনা মেনে পূজা উৎসব পালন করা হবে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপের জন্য সরকারি ভাবে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।