বরগুনা প্রতানিধি
বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম নিদ্রার চর। পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় বঙ্গব সাগরের তীরবর্তী এলাকায় এই গ্রামের অবস্থান এ গ্রামে প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের বসবাস। কিন্তু এই এলাকার দুঃখ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় নদীর তীরবর্তী এসব এলাকার বাসিন্দাদের জোয়ার ভাটার পানির সাথে যুদ্ধ করে বাচতে হয়। এখানকার বাসিন্দাদের ঝড়-বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেলে এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। গ্রাম রক্ষার বাঁধ না থাকায় এমন দুর্ভোগে দিন কাটে তিন শতাধিক পরিবারের।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নদীবেস্টিত এলাকা হওয়া কারনে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণ পানি প্রবেশ ঠেকাতে এই গ্রামবাসীর জন্য নেই কোনো বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর কয়েকবার পানিতে ভাসেন স্থানীয়রা। জোয়ারের পানি একটু বেশি হলেই রাস্তা-ঘাট ও বাড়ি-ঘর তলিয়ে যায়। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করেও মেলেনি প্রতিকার।
স্থানীয় বাসিন্দা সেন্টু বিশ্বাস বলেন, বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন মানুষ এ এলাকায় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এখানকার মানুষের এখন প্রধান দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া শুভ সন্ধ্যা সৈকতের বিপরীত দিকে নিদ্রার চর। এখানে আশ্রয়ন প্রকল্পের ৫০ টি পরিবার বেরিবাদ না থাকার কারণে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে ভাসেন। তাদের মতো এ গ্রামে অারো আড়াইশো পরিবার বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে এমন দুর্ভোগের থাকেন।
স্থানীয়রা বাসিন্দা বেল্লাল ফারাবী বলেন, নিদ্রা বাজার থেকে ফকিরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মান এখন খুবই প্রয়োজন। অন্তত ৩ শতাধিক পরিবার রক্ষা পাবে। বছরের পর বছর এই ভাবে পড়ে থাকলও জনপ্রতিনিধিরা কেউ দেখে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নিদ্রার চর এলাকার জেলে মুস্তাফিজ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে নদীর পাড়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি পুকুর ভেঙ্গে নদীর সাথে মিশে গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকার কারণে দিন দিন নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। এখনই যদি উদ্যোগ না নেয়া হয় তাহলে বিলীন হয়ে যাবে এই নিদ্রার চর।
আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মো. দুলাল বলেন, সরকারি বা বেসরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা এ এলাকার মানুষজন পায় না বললেই চলে। এখানকার মানুষজন নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। বেরিবাধ টা থাকলে অন্তত নিরাপদে বসবাস করতে পারতাম।
ইউপি সদস্য শহীদ অাকন জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আগে এখানে বেড়িবাঁধ ছিল। কিন্তু সিডরের ভয়াল থাবায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত এখানে আর কোন বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় নি কেউ। জিও ব্যাগ ও পাইলিং এর ব্যবস্থা করে নিদ্রার সুইজ গেট থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে তিনি আবেদন করছেন কিন্তু কোন আবেদনে কোন কাজ হচ্ছে না।
সোনাকাটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুলতান ফরাজী বলেন, বিষয়টা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি তিনি বলছেন এখানে একটা প্রজেক্ট হবে। তারাই বেরিবাধ নির্মাণ করবে কিন্তু কি প্রজেক্ট হবে তা জানি না।
উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি উল কবিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। পরে খুদেবার্তা দিলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তালতলী ইউএনও কাওসার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি জানিনা তবে, খোঁজ-খবর নিয়ে জানানো হবে।