বরিশালে বহুল আলোচিত স্বর্ণের দোকান চুরির রহস্য উন্মোচন করলো বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ।
স্টঢ রিপোর্ট :- মো: রিপন
জন নিরাপত্তায় সদা জাগ্রত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং ডিটেকশনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আসছে। জনগণের নিরাপত্তা ও কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কাজ করছে বিএমপির প্রতিটি ইউনিট । আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোর চক্র গ্রেফতার, ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, বিভিন্ন অপহরণ মামলার ভিকটিম উদ্ধার, বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারসহ বিভিন্ন রকমের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কোতয়ালী মডেল থানা "আশ্রাব এন্ড সন্স জুয়েলার্স" নামক দোকানে দিনে দুপুরে ক্লুলেস চুরির ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করে ব্যবসায়ীদের মনে স্বস্তি ফিরেয়ে আনে।
আজ ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ খ্রিঃ ১২.০০ ঘটিকায় বিএমপি সদর দপ্তরে বরিশালের সকল ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ কমিশনার বিএমপি জনাব মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার মহোদয় ব্রিফিং করেন।
ব্রিফিং সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ মার্চ'২০২০ খ্রি. কোতয়ালী মডেল থানাধীন ০৯নং ওয়ার্ডস্থ কাটপট্টি "আশ্রাব এন্ড সন্স জুয়েলার্স" নামক স্বর্ণের দোকান হতে দিনে-দুপুরে অভিনব কায়দায় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়। এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় জিআর-২৭৩/২০২০ মামলা হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ কমিশনার, বিএমপি মহোদয় সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার কোতোয়ালি মডেল থানা জনাব রাসেল কে অতিসত্বর ঘটনার রহস্য উদঘাটন পূর্বক আসামি শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও চোরাইমালামাল উদ্ধার এর নির্দেশ দেন। নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার জনাব রাসেল এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় , নিরলস পরিশ্রমে, প্রযুক্তিগত মেধা কাজে লাগিয়ে, প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনাটির মূল রহস্য উদঘাটন পূর্বক লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার ও চোরচক্র কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার জনাব রাসেল সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমেই উক্ত দোকানের সামনের রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করতঃ ব্যাপক পর্যালোচনা করেন। তার নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনাস্থলে চোর চক্রের সদস্যদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর সমূহ সনাক্ত করেন। উক্ত মোবাইল নাম্বারের বিপরীতে পাওয়া তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ এর ছবির সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলনা করলে জামাল, লিটন ও হাসানদের ছবির সাথে অনেকাংশে মিলে যায়। তাৎক্ষণিক প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান জেনে আসামীদের গ্রেফতারের জন্য এসি রাসেল এর নেতৃত্বে কোতয়ালী মডেল থানার একটি চৌকস দল চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর এর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। চট্টগ্রামের হালিশহর, কোতয়ালী, পাঁচলাইশ এবং বাকলিয়া থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ লিটনকে গ্রেফতার করতঃ তার দেয়া তথ্য মতে চোরাইকৃত স্বর্ণের আংশিক পরিমাণ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য মতে কুমিল্লা থেকে আসামী হাসান ও আলাউদ্দিনকে, ঢাকা হতে অলি আহাম্মদ ও সুমনকে এবং চট্টগ্রাম থেকে জামাল কে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে উক্ত মামলায় মোট ০৬ (ছয়) জন আসামী গ্রেফতার আছে।
চোর চক্রের সদস্যরা হলোঃ-
১। সুমন (৩৭), কোতয়ালী, বরিশাল-০৭ টি মামলা
২। অলি (৩০), তিতাস, কুমিল্লা-০৬ টি মামলা
৩। জামাল (৪০), দেবীদ্বার, কুমিল্লা-০৭ টি মামলা
৪। লিটন (২৮), পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম-০৪ টি মামলা
৫। আলাউদ্দিন (২৫) মুরাদনগর, কুমিল্লা-০৬ টি মামলা
৬। হাসান (১৭), মুরাদনগর, কুমিল্লা-০১ টি মামলা
৭। নয়ন (২২), নারায়ণগঞ্জ-০৫ টি মামলা
৮। জসিম ওরফে জনি (২৮), কচুয়া, চাঁদপুর-০৬ টি মামলা
৯। শুক্কুর (২০), লক্ষীপুর-০৪ টি মামলা
উল্লেখ্য যে, গ্রেফতার কৃত আসামীদের মধ্যে মোঃ লিটন দোষ স্বীকার করে ২০/১১/২০২০ খ্রি. তারিখ বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট আদালতে ফৌঃ কাঃ আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেছে। আসামী লিটনের দেওয়া তথ্য মতে জানা যায় যে, উপর্যুক্ত চুরির ঘটনার সাথে। ১। অলি আহাম্মদ ২। সুমন, ৩। জামাল, ৪। মোঃলিটন, ৫। আলাউদ্দিন, ৬। হাসান,৭। নয়ন, ৮।জসিম, ৯। শুক্কুরসহ এই ০৯ (নয়) জন আসামী জড়িত ছিল। আসামিরা মূলত একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃ বিভাগীয় চোরাই চক্রের সদস্য। এরা অত্যন্ত দুর্ধর্ষ, দুঃসাহসি ও বেপরোয়া প্রকৃতির। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সঙ্গবদ্ধ হয়ে অভিনব কায়দায় চুরি-ডাকাতি করাই এদের নেশা ও পেশা। চোরাইকৃত অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধার এবং আসামীদের গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে।
চুরির ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ক্যামেরা থাকায় উপরোক্ত চুরির ঘটনাটি ডিটেকশন করা সম্ভব হয়েছে। অতি দ্রুত প্রত্যেক বাড়িতে, মহল্লায়, মার্কেটে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহযোগীতা করার জন্য পুলিশ কমিশনার বিএমপি জনাব মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার মহোদয় সকলকে অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য যে, এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিঃ পুলিশ কমিশনার বিএমপি জনাব প্রলয় চিসিম মহোদয়, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিন), জনাব মোঃ মোকতার হোসেন পিপিএম-সেবা, অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) জনাব আকরামুল হাসান, সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার কোতোয়ালি মডেল থানা জনাব রাসেল, অফিসার ইনচার্জ কোতোয়ালি মডেল থানা জনাব নুরুল ইসলাম পিপিএম সহ বরিশালের সকল ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ সহ প্রমুখ