বরিশালে ভূত আতঙ্কে জমজম নার্সিং এর ৪ ছাত্রী হাসপাতালে
বরিশাল প্রধান
শেখর মজুমদার
বরিশাল নগরে রুপাতলীতে একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজের চার ছাত্রী আকস্বিক আতঙ্কে অচেতন ও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শুক্রবার (১২ ফেব্রয়ারি) দিবাগত রাত ১০ টার দিকে তাদের বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তিরতত শিক্ষার্থীরা হলো জমজম নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী জামিলা আক্তার (১৮), তামন্না (১৮), সেতু (২১) ও বৈশাখী (১৮)।
অসুস্থদের সহপাঠীরা জানান, কলেজের একাডেমিক ভবনের ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় একটি মাদ্রাসা ছিলো। মাদ্রাসাটি সরিয়ে নেয়া সেখানে ম্যাটস ও নার্সিং অনুষদের ছাত্রীদের জন্য আবাসনের (হোস্টেল) ব্যবস্থা করা হয়। পরীক্ষা ও প্রাকটিক্যালের জন্য যেখানে বর্তমানে শুধু নার্সিং অনুষদেরেই ৩৫ জনের শিক্ষার্থী রয়েছে, আর ম্যাটস এর রয়েছে আরো ১৫-২০ জন। করোনার শুরু থেকে বন্ধ থাকলেও গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ছাত্রীরা হোষ্টেলে আসে। আবাসিকের স্টাফ খালেদা জানান, বৃহস্পতিবার মিথিলা নামের একটি মেয়ে জ্বিন বা ভূতের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পরে। যদিও হুজুর এনে তাকে তেল ও পানি পড়া দেয়া হয়।
এরপর শুক্রবার সন্ধ্যার পর জামিলা নামের এক ছাত্রী আতঙ্কে চিৎকার দেয় এবং অসুস্থ হয়ে পরে। এতে আবাসিকে হইহুস্তল লেগে যায়। ওই সময়েই আতঙ্কে বাকী তিন ছাত্রীও অসুস্থ পরে। অসুস্থ সহপাঠীদের সাথে আসা শিক্ষার্থীদের দাবি, আবাসিকের ছাদের ওপরে রাতে হাটাহাটির শব্দ ও তাদের দুই সহপাঠীর হাতে হঠাৎ অজ্ঞাত আচরের দাগ থেকেই এ আতঙ্কের সৃষ্টি। তাদের দাবি এ বিষয়টি গত কয়েকদিন ধরেই ছাত্রীরা কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেছে। তবে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি। তবে কলেজের কিছু শিক্ষার্থীর দাবি, অজানা আতঙ্ক তাড়াতে কলেজ কর্তৃপক্ষ দোআ-মিলাদও পরিয়েছিলেন সম্প্রতি, তবে তা কোন কাজে আসেনি।
অসুস্থদের সাথে আসা শিক্ষার্থী মোঃ মেহেদি জানান, আতঙ্কে ছাত্রীদের অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই অদূরে থাকা ছাত্রাবাস থেকে তারা বেশ কয়েকজন সহপাঠি এগিয়ে আসেন। পরে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলে তারা ঘটনাস্থলে আসলেও বিষয়টি গোপন রাখতে বলেছিলো। এরপর সহপাঠীরাই অসুস্থ ৪ শিক্ষার্থীকে নিয়ে হাসপাতালে আসি, তবে কলেজ থেকে তখন কেউ আমাদের সাথে আসেনি। আর যে স্যার এখানে এসেছেন তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। শিক্ষার্থীদের দাবি, আবাসিক ছাত্রীদের দেখভালের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের, কিন্তু হাসপাতালে অনেকটাই ফেলে রাখা হয়েছে ৪ শিক্ষার্থীকে। সহপাঠী ব্যতিত এক মহিলা বাবুর্চি ছাড়া কেউ পাশে নেই। এ অবস্থায় মিডিয়ার সাথে কথা বলায় টিসি আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালে উপস্থিত কলেজের নার্সিং ইন্সট্রাক্টর জালিস মাহামুদ বলেন, কোনো কারনে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পরেছে। তবে শিক্ষার্থীরা যা বলছে তেমন কোন বিষয় নয়। তাদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে এ বিষয়ে ওয়ার্ডের দ্বায়িত্বরত চিকিৎসকরা কোন বক্তব্য যেমন দিতে চাননি।
এ ব্যাপারে জমজম নার্সিং এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মুন্সি এনাম জানান, আবাসিক ছাত্রীদের ভীতি দূর করতে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে হুজুর এনে মিলাদ-দোয়ার আয়োজন করা হয়। এরপরও তাদের ভয় কাটেনি, উল্টো তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অপরদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক রিয়াজুল ইসলাম জানান, কেন এমন ঘটনা ঘটলো তা তদন্ত চলছে। এদিকে এই ঘটনার ৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৫ জন হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে গেছে।