এস এম নওরোজ হীরা বরিশাল
বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৬, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৪ এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থীদের মধ্যে নগদ টাকা ও সম্পদে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।
ভোটের মাঠে থাকা মেয়র পদের ৬ বৈধ প্রার্থীর মধ্যে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেশি।
এরপরেই রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস।
নগদ টাকার ক্ষেত্রে সমানে সমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান রুপন।
অপর ৩ প্রার্থীর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৫০ লাখ টাকার নিচে।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত
আবুল খায়ের আবদুল্লাহর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে তার বার্ষিক আয় সাড়ে ১০ লাখ টাকার উপরে। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে তার নগদ রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ টাকা।
স্ত্রী লুনার রয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা রয়েছে নিজের নামে পৌনে ৩ লাখ এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে খুলনায় ৪ তলা একটি ভবন, ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি ও উত্তরায় ৬টি এপার্টমেন্ট।
তার নিজের ও স্ত্রীর নামে পৃথক দুইটি গাড়ি আছে। নিজের গাড়ির মূল্য ৩২ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর গাড়ির মূল্য ৪৯ লাখ টাকা।
স্ত্রীর নামে ২০ ভরি স্বর্ণের পাশাপাশি নিজেরও রয়েছে ১০ ভরি স্বর্ণ। এসব স্বর্ণ উপহার হিসেবে পেয়েছেন এ দম্পত্তি।
তার লাইসেন্স করা একটি পিস্তল ও একটি শটগার রয়েছে।
১৯৫৭ সালে জন্ম নেওয়া ৬৬ বছর বয়সী এই প্রার্থীর কোনো দেনা নেই। চলমান কোনো ফৌজদারি মামলা নেই বলে হলফনামায় বলা হয়েছে।
হলফনামায় তিনি নিজেকে স্ব-শিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন।
ইকবাল হোসেন তাপস
জাতীয় পার্টি মনোনীত ইকবাল হোসেন তাপসের নামে দুইটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তবে উভয় মামলা সুপ্রিম কোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলাও রয়েছে।
তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক এবং ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তার শেয়ার রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বার্ষিক সম্মানী পান ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক পদে থেকে তিনি বার্ষিক বেতন ভাতা পান প্রায় ৭৭ লাখ টাকা।
তার নগদ টাকা আছে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা; নিজের ও স্ত্রীর মিলিয়ে ব্যাংকে জমা আছে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা। একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার, একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজসহ ৩টি প্রতিষ্ঠানে শেয়ার বাবদ প্রায় ১ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি আছে জাতীয় পার্টির এই নেতার।
এ ছাড়া ৩৮ লাখ টাকার একটি গাড়ি ও ৬০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে। দামি আসবাপত্র ও দামি ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীও আছে তার।
স্থাবর সস্পত্তির মধ্যে রয়েছে সামান্য কৃষি জমি, ৫ তলা ভবনের ফরায়েজের কিছু অংশ থাকার কথা হলফনামায় বলা হয়েছে।
তার নামে ১৪ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি।
মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থীর পেশা শিক্ষকতা। এর পাশাপাশি রয়েছে এপার্টমেন্ট ভাড়া ও ব্যবসা। এই তিন খাত থেকে তার বার্ষিক আয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
তার বিরুদ্ধে পাঁচটি ফৌজদারি মামলা হলেও তা নিষ্পত্তি হয়েছে। ব্যাংকে এক লাখ টাকা জমা থাকলেও নগদ রয়েছে ৪৩ লাখ টাকা।
সব প্রার্থীর চেয়ে জমিজমা এই প্রার্থীর বেশি রয়েছে। নিজের নামে জমি রয়েছে প্রায় ১৪ একর। এর মধ্যে ৮ একরের বেশি কৃষিজমি এবং বাকিটা অকৃষিজমি। পাকা ভবন রয়েছে একটি ও এপার্টমেন্ট রয়েছে দুটি।
কামরুল আহসান রুপন
প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে রয়েছেন এমএসএস করা এই প্রার্থী।
তার আয়ের উৎস মৎস, পশু ও কৃষি খামার। বছরে তার আয় ৪ লাখের কিছু বেশি থাকলেও প্রায় ৩০ লাখ টাকার গাড়ি রয়েছে। নগদ আছে ৪৩ লাখ টাকা। একটি কোম্পানিতে তিনি এক কোটি টাকার শেয়ারের মালিক রয়েছেন।
সব মিলিয়ে তার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকার। এছাড়া ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে ৭ লাখ টাকা। বাবাকে (প্রয়াত) ঋণ প্রদান হিসাবে দেখিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া মা ও বোনের কাছ থেকে তিনি ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে কিছু কৃষি ও অকৃষি জমি। কোনো মামলা নেই এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
অন্য দুই প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার এবং জাকের পার্টির মিজানুর রহমানের রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা ও ভাড়া তাদের আয়ের উৎস।
আলী হোসেনের নগদ টাকার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। মিজানুর রহমান নগদ টাকার পরিমাণ শূন্য উল্লেখ করেছেন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে ৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়; বাকি চারজনের প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান স্মার্ট বরিশাল ডটকমকে জানান, বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৪ এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
২৫ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। পরদিন প্রতীক বরাদ্ধ। ১২ জুন ভোট গ্রহণ হবে।