বরুড়ায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা হত্যার রহস্য উদঘাটন, নেপথ্যে স্ত্রীর পরকীয়া!
কুমিল্লার বরুড়ায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা চাঞ্চল্যকর শরীফ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা পুুলিশ।
পরকীয়ার জের ধরে প্রেমিককে সারাজীবনের জন্য কাছে পেতে স্বামীকে হত্যার সহযোগিতা করে স্ত্রী হিমু।
হত্যা নিশ্চিত করে কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে তাই প্রেমিকার হাত পা বেঁধে বাসা থেকে চলে যায় প্রেমিক আশিক।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ২২ ডিসেম্বর ঘাতক আসিক ও ২৫ ডিসেম্বর হত্যার সহায়তাকারী হিমুকে গ্রেফতার করলে শরীফ হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়। পরে উভয়েই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর ইকতিয়ার বুধবার রাতে এ কথা নিশ্চিত করেন।
আটককৃত আসামি, নিহত শরীফের স্ত্রী মোনালিসা হিমু (২৯) সিরাজগঞ্জ জেলার হোসেনপুর গ্রামের মো.আবদুল মান্নানের মেয়ে ও তার পরকীয়া প্রেমিক মো. আশিক (২৭) কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের চেঙ্গাচ্ছাল গ্রামের নাসিরুল আলমের ছেলে।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, নিহত শরীফ কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বরুড়া জোনের অধীনে আড্ডা কর্মকর্তা ও আসামি আশিকের চাচা সিনিয়র ইলেকট্রিশিয়ান রেজু মিয়া একই অফিসে চাকরির সুবাদে উভয় পরিবারের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সেই সুবাদে নিহত শরীফের পরিবারের সাথে আসামি আশিকের পরিবারের একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিহত শরীফের বাসায় আসা যাওয়ার ফলে স্ত্রী হিমুর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে আশিক। এক পর্যায়ে নিহতের অগোচরে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় দৈহিক সম্পর্কের ঘটনাও ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় নিহতের স্ত্রী হিমু ও আশিক যুক্তি পরামর্শ করে যে, নিহত শরীফ তাদের জীবনে না থাকলে তাদের পরকীয়ায় প্রেমে আর বাধা থাকবে না। তারই সুত্র ধরে উভয়ই পূর্ব থেকে পরিকল্পনা করে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি রাত প্রায় সাড়ে ১২ টায় আশিক শরীফের বাসায় গেলে নিহতের স্ত্রী হিমু দরজা খোলে দিলে শরীফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হাতুড়ি দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত করলে সে ছটফট করতে থাকে। পরে প্রেমিক আশিক ও স্ত্রী হিমু শরীফের গলায় গামছা পেঁচিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ঘটনাটি সাজানোর জন্য নিহতের স্ত্রী প্রেমিকা হিমুকে হাত-পা বেঁধে রেখে আশিক বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক ইকতিয়ার জানান, হত্যাকান্ডের পর প্রথম বরুড়া থানায় মামলা হয়। পরে এর তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা শাখার নিকট হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণের পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত আসামি আশিককে ২২ ডিসেম্বর কুমিল্লা নগরী থেকে এবং ২৫ ডিসেম্বর হিমুকে সিরাজগঞ্জের বাবার বাড়ি থেকে ডিবি কুমিল্লা গ্রেফতার করে। পরে আশিক ২৩ ডিসেম্বর এবং হিমু ২৫ ডিসেম্বর কুমিল্লা আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।