1. [email protected] : দৈনিক বিজয়ের বানী : দৈনিক বিজয়ের বানী
  2. [email protected] : Hasan :
  3. [email protected] : dev : dev
বিরামপুরে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্য গ্রামীণ কাঁথা - dainikbijoyerbani.com
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন
ad

বিরামপুরে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্য গ্রামীণ কাঁথা

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১৯০ Time View

এস এম মাসুদ রানা বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি-

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিরামপুরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ কাঁথা। এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খেটে খাওয়া দিনমুজুর পরিবারের গৃহবধূ, কিশোরীদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরী হতো গ্রামীণ কাঁথা। এই কাঁথায় তাদের হাতের ছোয়ায় ফুটিয়ে তোলা হতো নানা নকশা। ঐতিহ্য গ্রামীণ কাঁথা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে।

লেপ, কম্বল ও দামি চাদরের কারণে চরাঞ্চল বা গ্রামের দারিদ্র পরিবারের সংসারের গ্রামীণ কাঁথা সেলাইয়ের বাড়তি আয়ের উৎস্য এখন আর নেই। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যে মিশে আছে গ্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন এই সুচ শিল্প। সেই সাথে এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে গ্রামের আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড। সুচের ফোঁড়ে স্বপ্ন বুনন পল্লী নারীদের উপার্জন প্রাচীন ঐতিহ্য গ্রামীণ কাঁথা আধুনিকতার স্পর্শে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

গ্রামের বিয়েতে কন্যার শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হতো কিংবা শীত নিবারণের জন্য কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতো গ্রামাঞ্চলের কিশোরী ও মহিলারা। গ্রামের নারীদের আড্ডা আর খোস গল্পের ছলে কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে সচারচর আর চোখে পড়ে না। পুরাতন শাড়ি, লুঙ্গি বা ওড়না কাপড়ে রং-বেরঙ্গের সুতা দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করা হয় এ কাঁথা।

গ্রামের নারীরা মনের মাধুরী মেশানো অনুভুতিতে নান্দনিক রূপ বর্ণ-বৈচিত্রে এই গ্রামীণ কাঁথা বুনন করতেন। নারীদের সুক্ষম হাতে সুচ আর লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, হলুদসহ কয়েক রংয়ের সুতায় নান্দনিকতার বৈচিত্রে সেলাই করা হয়ে থাকে কাঁথা। বিরামপুরেএই সুই-সুতার এফোঁড়-ওফোঁড় করার মাধ্যমে ফুল-ফল, গাছ-লতাপাতা, জিরা গাঁথুনি, চেইন গাঁথুনি, মরিচ লাইট গাঁথুনিসহ বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলা যায় এই কাঁথায়।

এছাড়া আপন মনের ইচ্ছায় দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র কাঁথায় ফুটিয়ে তোলেন কাঁথা শিল্পীরা। তারা নিজেরাই এর শিল্পী, রূপকার এবং কারিগর। এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে গ্রামের আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড। বর্তমান সময়ের ব্যবধানে নতুনত্বের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে হাতের সেলাইয়ে গড়া এই কাঁথার ঐতিহ্য। হাতে তৈরি নানা রকমের ফুল-ফল, পশু-পাখি, গাছ-পালা এবং প্রকৃতির নকশায় সজ্জিত হয়ে উঠত কাঁথা।

বড় বড় কারখানায় তৈরিকৃত দেশি-বিদেশি রং-বেরঙ্গের রেডিমেট লেপ-কম্বলের চাপায় হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গ্রামীণ শিল্পটি। কালের বিবর্তনে আজকাল আর চোখে পড়ে না গ্রামীণ এ কাথাঁ সেলাই এর দৃশ্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভাবী নারীরা সংসারের সব কাজ শেষে অবসরে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করতেন। জায়গা ভেদে একটি কাঁথা সেলাই করতে ১০ দিন হতে এক মাস সময় লাগে। আর মজুরি হিসেবে মেলে ৫শ’ হতে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত।

নিজেদের সংসারে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সন্তানদের বায়না পূরণ, লেখাপড়ার খরচ মেটাতে বেশ ভূমিকা রাখত হাতে তৈরি এই কাঁথা।
বিরামপুর পৌর শহরের চাঁদপুর মহল্লায় এলাকার কাঁথা সেলাইকারী কুলসুম বেগম, তসলিমা বেগম জানান, আগে আমরা সবসময় নতুন বা পুরাতন কাপড় দিয়ে কাঁথা সেলাই করতাম। এখন দেশি বিদেশি কম্বল, লেপ আসায় এসব হারিয়ে গেছে। সংসারের কাজের ফাঁকে কাঁথা সেলাই করে আয় রোজগার হতো, এখন তা আর হয় না।

এখন মানুষ কাঁথা সেলাই করে নিতে চায় না, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে একটা কাঁথা নিয়ে এসে সেলাই করি ৫ থেকে ৮শ’ টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে পারি না। নিজের কাপড় কিনতে পারি না। পাশাপাশি পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারি। কিন্তু এখন এর চাহিদা নেই। একই এলাকার শিক্ষার্থী মারুফা খাতুন জানান, পড়াশুনার পাশাপাশি কাঁথা সেলাইয়ের কাজ পেলে তা করি। সেই টাকা দিয়ে পড়াশুনার কাজে লাগাই।

এ ব্যাপারে সমাজ সেবক মোতাহার চৌধুরী জানান, দারিদ্র পরিবারের মহিলাদের সংসারের বাড়তি আয় ছিল গ্রামীণ এ কাঁথা। তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঁথা। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি ও নতুন কর্ম-সংস্থান তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে এই খাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসলে হারানো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তবে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে ঋণ সহায়তার পাশাপাশি বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ad

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
ad
ad
© All rights reserved 2022
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: সীমান্ত আইটি