বায়জিদ হোসেন, মোংলাঃ
শীত এলেই এক সময়ে গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি, পায়েস, রসের গুড় দিয়ে ভাঁপা পিঠা এবং গাড় রস তৈরি করে মুড়ি, চিড়া, খই ও চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলির মহোৎসব চলতো। এক দশক আগেও এমন চিত্র চোঁখে পড়তো বাগেরহাট তথা মোংলা, রামপাল, মোড়েলগজ্ঞ সহ পার্শবর্তী উপজেলা জুড়ে। কিন্তু আগের মতো গ্রাম্য রাস্তার দুপাশে সারি সারি খেজুর গাছ আর নেই। এক সময় খেজুর রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন শতশত গাছি। এখন আর দেখা মিলে না এমন দৃশ্যের। গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার ও নতুন করে খেজুর গাছ রোপণে মানুষের আগ্রহের অভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও খেজুরের রস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও রাস্তার আশেপাশে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু খেজুর গাছ। মোংলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাতে গোনা কয়েকজন গাছি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন এ ঐতিহ্য। তবে সেই আগের দিনের মতো জৌলুস নেই। খেজুর গাছে মাটির হাঁড়ির বদলে প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। নেই গাছিদের সেই সাঁজগোঁজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলের পুরানো কাঁচা রাস্তা সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, বনাঞ্চল ধ্বংস ও ইটের ভাটায় খেজুর গাছের কদর বেশি থাকায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। অপরদিকে গাছি পেশায় নতুন করে কেউ না আসায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐহিত্য। এছাড়া অনেক গাছ থেকে রস চুরি হয়ে যাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন গাছিরা। এমন চলতে থাকলে একবারেই হারিয়ে যাবে খেজুর রস। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের চাঁদপাই গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রিয়াজ হোসেন বলেন, ‘আগে আমাদের অনেকগুলো খেজুর গাছ ছিলো। ভেকুতে রাস্তায় কাজ করার সময় উপরে ফেলেছে। এখন অল্পকিছু গাছ আছে। সেগুলো পাশের বাড়ির কাকারে দিয়ে কাটাই। এতে নিজেদের খাবার রসটুকু হয়। গাছি এমদাদুল হাওলাদার বলেন, ‘আগের মতো আর গাছ নেই। যে কয়টা আছে এগুলো কাটি (রস সংগ্রহ করি)। এতে নিজেদের খাবার রসটুকু হয়। গাছি রসুল আলী বলেন, ‘আমি ১৫/ ২০ বছর ধরে খেজুরের গাছ থকে রস সংগ্রহের কাজ করছি, আগে প্রচুর পরিমাণে রস সংগ্রহ করতাম। পুরো শীতের মৌসুম কাটতো খেজুর গাছ নিয়ে। এখন মাত্র ৪০/৪৫ টি গাছ নিয়েই আছি। খেজুর রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা স্বত্বেও গাছ না থাকায় সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। ইটভাটা মালিকেরা খেজুর গাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে, অনেকে বেশি টাকার আশায় গাছ বিক্রি করছেন। আবার অনেক সময় অজ্ঞাত কারণে গাছ মরে যাচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিন বলেন, ‘খেজুর গাছ একদিকে গ্রামের শোভা বর্ধন করে অন্যদিকে মুখরোচক খাবার রসও পাওয়া যায়। এ গাছ আমাদের দেশ থেকে আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। এখনই যদি খেজুর গাছ রক্ষণাবেক্ষণ ও নতুন গাছ রোপণ করা না হয় তাহলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। খেজুর গাছ যাতে বিলুপ্ত না হয় এজন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং সরকারেরও এদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ।