খুলনা জেলা প্রতিনিধি ঃ
আজ ২ আগষ্ঠ সোমবার বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পি সি রায়) এঁর ১৬০তম জন্মদিন। তার জন্ম গৌরবে শুধু তার জন্মভুমি দক্ষিণ খুলনার অবহেলিত জনপদ পাইকগাছার রাড়ুলী গ্রামই ধন্য হয়নি বরং ভারতবর্ষের মানুষ তার জন্ম গৌরবে গৌরাবাম্বিত। তিনি নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন এইভাবে “আমি বৈজ্ঞানিকদের দলে বৈজ্ঞানিক, ব্যবসায়ী সমাজে ব্যবসায়ী, গ্রামক সেবকদের সাথে গ্রামসেবক আর অর্থনীতিবিদদের মহলে অর্থনীতিজ্ঞ”।
প্রতিবছর জেলা প্রশাসন খুলনার উদ্যোগে এবং উপজেলা প্রশাসন ও রাড়ুলী ইউনিয়ন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় বিশ্বখ্যাত এই বিজ্ঞানীর জন্মভিটা জেলার পাইকগাছার রাড়ুলীতে বিজ্ঞানীর জীবন দর্শন, কর্মময় জীবন সম্পর্কিত তথ্য চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে রচনা ও কুইজ প্রতিযোগীতাসহ বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্য দিয়ে জন্ম বার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। কিন্তু এবার বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারনে শুধু মাত্র বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হবে। এছাড়া কোন অনুষ্ঠান থাকছে না বলে জানা গেছে।
জগৎ বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আশ্চার্য স্যার পি, সি, রায়, জেলার পাইকগাছার কপোতাক্ষ নদের তীরে রাড়ুলী গ্রামের বিখ্যাত জমিদার বংশের রায় পরিবারে ১৮৬১ সালের ২ আগষ্ট (বাংলা ১২৬৮ সালের ১৮ শ্রাবণ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হরিশ্চন্দ্র রায় ও মাতার নাম ভুবন মোহিনী রায়। বিজ্ঞানী ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি, রসায়নবিদ, সমাজ সেবক, সমবায় আন্দোলনের পুরোধা এবং রাজনীতিবিদ।
পি, সি রায় ১৮৯২ সালে কলকাতার মানিক তলায় মাত্র ৮’শ টাকা পুঁজি নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যাল এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ঔষধ শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাপড়ের মিল ও জন্মভূমি রাড়ুলীতে সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একাধারে ২০ বছর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।
ব্রিটিশ সরকার ১৯৩০ সালে তাকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়া একই বছর লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভারত বর্ষের মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। চিরকুমার এই বিজ্ঞানী তার জীবনের অর্জিত সমস্ত সম্পদ মানব কল্যানে দান করে গেছেন। ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন ৮৩ বছর বয়সে এই বিজ্ঞানীর জীবনাবসান ঘটে। বিজ্ঞানীর ১৫০ গবেষণা গ্রন্থ পৃথিবীর বিভিন্ন জার্নালে স্থান পেয়েছে।
দেশে বিদেশে তার অসংখ্য সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান আজও মানব সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য বিশ্ব বরেণ্য এই বিজ্ঞানীর বসতবাড়ীটি অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকায় ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই রাত ৩টার দিকে আকস্মিকভাবে সুতিকাগৃহ (বিজ্ঞানীর জন্ম ঘর) সহ দ্বীতল ভবনের দুটি কক্ষ ভেঙ্গে পড়ে। অন্যান্য কক্ষের অবস্থা এতটাই খারাপ যে যেকোন মুহুর্তে পুরো বিল্ডিংটিই ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বিভিন্ন সময় দেশী বিদেশী পর্যটকরা বিজ্ঞানীর জন্ম স্থান পরিদর্শনে এসে বাড়ীটির ভগ্নদশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এলাকাবাসী বাড়িটি সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ঠ সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারনে এ বছর বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী পি সি রায়ের জন্ম দিনে বিগত বছরের ন্যায় জাকজমক ভাবে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকালে বিজ্ঞানীর জন্মভিটা রাড়–লীতে বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হবে।