জিহাদ হোসেন রাহাতঃ
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কেল্লা নামক স্থানে নান্দনিক এই মসজিদের অবস্থান। মসজিদটির নাম "আস-সালাম জামে মসজিদ"। বাংলাদেশের স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা নবী নেওয়াজ খান শমীন এবং তার একঝাঁক অভিজ্ঞ টিম তৈরি করে এই মসজিদটির নকশা।
প্রান জুড়ানো স্থাপত্যের সুন্দর সংমিশ্রণ এবং নান্দনিক ডিজাইনের এক বিস্ময়কর স্থাপনা আস-সালাম জামে মসজিদ। এই মসজিদের অসংখ্য আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে মসজিদটিতে নেই কোন জানালা।
প্রাচীন স্থাপত্য আর ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার চলমান প্রকাশ হচ্ছে আজকের এই বাংলাদেশ। এদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অগণিত ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই স্থাপনার মধ্যাকার কোনো কোনো স্থাপনা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে স্থান করে নিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যেও। দেশের ঐতিহাসিক এসব স্থাপনার অধিকাংশই প্রাচীন মোঘল বা বৃটিশ শাসন আমলে স্থাপিত। এসব স্থাপনা তৈরি করেছিলেন প্রাচীন রাজা-দ্বিরাজরা । সমকালিন সময়েও দেশে তৈরি হচ্ছে শতসহস্র স্থাপনা। তবে নান্দনিক ডিজাইনের সমন্বয়ে সম্পুর্ন নতুন বৈশিষ্ট্যের স্থাপনা তেমন চোখে পড়ে না বললেই চলে।
তার বিপরীতে নান্দনিক কারুকার্য এবং সুন্দর অবয়বের এই মসজিদটি দেশের বর্তমান নির্মাণ কৌশলের এক অনন্য নিদর্শন ।দেশের বিভিন্ন স্থান হতে অসংখ্য দর্শনার্থীর প্রত্যহ আগমন ঘটছে এই নান্দনিক মসজিদ প্রাঙ্গণে।
এই মসজিদের রয়েছে ব্যতিক্রমি কিছু বৈশিষ্ট্য, যা কিনা দেশের অন্য কোনো মসজিদের সঙ্গে মেলেনা বললেই চলে। দোতলা এই মসজিদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে, এই মসজিদটির নেই কোন জানালা। কেবলমাত্র মুসল্লিদের আগমন ও বহির্গমণের জন্য রয়েছে দুটি মাত্র দরজা।আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কোনো প্রকার বৈদ্যুতিক বাতি ও জানালা ব্যাতিত এই মসজিদ সর্বক্ষণই থাকে আলোকিত।
মসজিদটির ভেতরে বৃষ্টির পানি ও পানি সংরক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৪টি জলাধার। যেগুলো কিনা গরমের সময় মসজিদকে রাখবে শীতল। মূলত জলাধারগুলোতে রাখা শীতল পাথর গ্রীষ্মকালে মসজিদকে শীতল করে রাখতে সক্ষম। আবার দোতলা এই মসজিদের নিচতলাকে ভাগ করা হয়েছে দু'ভাগে। এর সামনের অংশে মেহরাব ও মসজিদের মূল অংশ। পেছনের দিকটার মাঝখানে গলিপথ (ভল্টেড ওয়াকওয়ে) । তার দুই ধারে রয়েছে শীতল জলাধার এবং রোদ, বৃষ্টির প্রবেশ পথ।
তাছাড়া আগত মুসল্লিদের জন্য রয়েছে একটি প্রশান্তিময় স্থান। পেছনের দিকটায় রয়েছে একটি বড় গ্যালারি। যেখানে বসে মুসল্লিরা নিজ মনে করতে পারেন ইবাদত। গ্যালারি অংশের পিছন থেকে দোতলায় উঠার সিঁড়ি। দোতলায় রয়েছে মহিলাদের নামাজ পড়ার জায়গা।
অবিরাম কর্মযজ্ঞ শেষে ২০২১ সালের শেষের দিকে মসজিদটি উন্মুক্ত করা হয় মুসল্লীদের জন্য। প্রায় দশ হাজার আট'শ বর্গফুটের দোতলা এই মসজিদটির নির্মাণ ব্যয়ভার বহন করেছে রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। তাছাড়া আকর্ষনীয় এই মসজিদটির সাথে একই অর্থায়নে নির্মিত হওয়া শিক্ষা কমপ্লেক্স আস-সালাম হাফেজিয়া মাদরাসায় ব্যবস্থা করা হয়েছে হাফেজি ও ইংরেজি শিক্ষার।