বিয়ানীবাজারে নতুন মসজিদ নির্মাণ নিয়ে বিএসএফের বাধা নেই।
সিলেট ব্যুরো:
সিলেটের বিয়ানীবাজারের গজুকাটা সীমান্ত এলাকায় ২শ’ বছরের পুরনো মসজিদের পাশে নতুন মসজিদ নির্মাণ নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বাধা ও নো-ম্যান্স ল্যান্ডে বাংকার খনন নিয়ে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে মৃদু উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এ নিয়ে গতকাল বিকেলে সুতারকান্দি আইসিপি’তে বিজিবি-বিএসএফ’র পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের (৫২ বিজিবি) অধিনায়ক লে.কর্নেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকী। ভারতীয় পক্ষে নেতৃত্ব দেন-৭ বিএসএফ’র অধিনায়ক বি এস মিনহাজ।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, পতাকা বৈঠকে বিএসএফ মসজিদ নির্মাণে বাধা দেবে না বলে বিজিবি’কে মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করে। বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ’র খননকৃত বাংকার তুলে নেয়ার আহ্বান জানায় বিজিবি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানিয়েছে বিএসএফ।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের (৫২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় বাহিনী জিরো লাইনের ১৫০ গজের ভেতরে প্রবেশ করে কোনো ধরনের বাধা প্রদান করতে পারে না।
তারা সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে নো ম্যান্স ল্যান্ডের ১৫০ গজের মধ্যে নির্মিত ২০০ বছরের পুরনো মসজিদ পুন:নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করেছে। এ নিয়ে আমরা কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, পতাকা বৈঠকে মসজিদ নির্মাণে বাধা না দেয়া এবং বাংকার সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএসএফ আমাদের বক্তব্য আমলে নিয়েছে এবং মসজিদ নির্মাণে বাধা প্রদান করবে না বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। তিনি বলেন, মসজিদের নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে।
তবে, গতকাল রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিএসএফ তাদের বাংকার সরায়নি। তিনি বলেন, এ নিয়ে আরো পতাকা বৈঠক হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলার গজুকাটা সীমান্ত এলাকার ১৩৫৭ নং পিলারের ভিতরে বাংলাদেশ অংশে গজুকাটা গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের অবস্থান। ২০০ বছরের পুরনো মসজিদের পাকা দালান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এলাকাবাসী সংলগ্ন এলাকায় নতুন একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। নির্মাণ কাজ চলাকালে বিএসএফ আগে একবার বাধা দিলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তা সমাধান হয়।
দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আফতাব উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রামবাসী নেওয়ার পর তারা বিজিবির সহায়তা চান।
তৎকালীন বিজিবি-৩২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার বিএসএফের কমান্ডারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলে তারা নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
কিন্তু, নির্মাণ কাজের নিচের অংশের পিলারসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষে ছাদ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুতির একপর্যায়ে বিএসএফ সরাসরি বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে মসজিদ নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করে।
এদিকে, দীর্ঘ তিন বছর পর গত সপ্তাহে বিজিবি-৫২ এর সঙ্গে বিএসএফের বৈঠকে মসজিদটি পুন:নির্মাণ কাজ বিষয়ে আলোচনা হয় এবং এ বিষয়ে বিএসএফ বাধা প্রদান করবে না বলে আশ্বস্ত করে। মসজিদ নির্মাণের কাজ ফের শুরু হলে গত শনিবার বিএসএফ তাতে বাধা প্রদান করে।
দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, বিএসএফ মসজিদ নির্মাণে বাধা দেয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা হলেও ভয়ের সঞ্চার হয়। তবে, বিজিবি-বিএসএফ বৈঠকের পর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এদিকে, গতকাল বিকেলে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশিক নূর গজুকাটা সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নো-ম্যান্স ল্যান্ড থেকে বাংকার সরানো হয়নি বলে জানিয়েছে বিজিবি সূত্র।
Leave a Reply