বেনাপোল দিয়ে পাঁচ বছরে আমদানি ৮৯ লাখ টন, রফতানি ১৯ লাখ টন পণ্য
তারিখ ০১/০২/২০২১রোজ সোমবার
মোঃ নজরুল ইসলাম জেলা প্রতিনিধি
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৫ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য। এ সময় বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ স্থলবন্দরের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৮ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ সময় ভারতে রফতানি হয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৯ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ টন ও রফতানি ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৯ টন ও রফতানি ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ টন ও রফতানি ৪ লাখ এক হাজার ১১৭ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন এবং রফতানি ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর ৬ মাসে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার ১১৩ টন। এ সময় রফতানি হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ২৯৫ টন পণ্য।
বেনাপোল বন্দরে ভ্রমণ খাতে সরকারের রাজস্ব কমেছে ৫১ কোটি
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, মেশিনারি যন্ত্রাংশ, সুতা ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য, মাছ, মেলামাইন, তৈরি পোশাকও বসুন্ধরা টিসু উল্লেখ্যযোগ্য। বর্তমানে বেনাপোল বন্দরের স্থল ও রেলপথে ভারতের সঙ্গে সব ধরনের পণ্যের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চলছে। প্রতি বছর এ পথে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকা পণ্য রফতানি হয়ে থকে। আমদানি পণ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়ে থাকে।
বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে প্রথম থেকে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের আরো বেশি পণ্য আমদানি ইচ্ছে থাকলেও বন্দরের অবকাঠামোগত নানান সমস্যায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না। লোকসানের মুখ্যে পড়ে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ছেড়ে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে। এতে দিন দিন আমদানি কমে আসছে বন্দরটি দিয়ে। তবে আমদানি কমলেও রফতানি বেড়েছে এ বন্দরটি দিয়ে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হলে আমদানির পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যও আরো বাড়বে বলে সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, দেশের স্থলপথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন অবহেলায় এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানের শিকার হচ্ছেন তেমনি সরকারও হারাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব। বন্দরকে নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নেয়া হলে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব বলে অভিমত পোষণ করেন তিনি।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানিকারকরা জানান, বন্দরে আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় ব্যবসায়ীদের দাবি রয়েছে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য রাখাতে চাহিদামতো জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে অবহেলায় পণ্য রাখতে হচ্ছে পণ্য। এতে রোদবৃষ্টিতে পণ্যের যেমন গুনগতমান নষ্ট হচ্ছে তেমনি চুরির আতঙ্ক থাকছে। রয়েছে ক্রেন ও ফর্কক্লিপের সংকট। বারবার বলা সত্ত্বেও বন্দরের তেমন পদক্ষেপ গ্রহণ দেখা যাচ্ছে না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, কেবল অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এ পথে বাণিজ্য প্রসার ঘটছে না। আজও বাস্তবায়ন হয়নি ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার দেশীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ তেমন কঠিন কিছু হবে না।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন তরফদার জানান, ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার নির্মাণ হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য বাজেট হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরের চারিপাশ দিয়ে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ এবং আরো জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা বন্দরের রয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্য প্রসারে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
মোবাইল ০১৭১২৯৪৭৮৭১