মোঃ নজরুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি, বেনাপোল স্থল বন্দরে অভিনব সব পদ্ধতিতে শুল্ক চুরির যে সব ঘটনা ঘটে তার একটি আবার উদঘাটিত হয়েছে বন্দরের ৩৯ নং পণ্য শেডে। পন্যবাহী১৬টি ট্রাকে ইনগট লোড হয়। তার মধ্যে একটি ট্রাক যার নং ঢাকা মেট্র ট-১৬-৮১৬৩ বন্দর থেকে ইনগট লোড নিয়ে বন্দর ত্যাগ করার সময় কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা ট্রাকটি আটক করে। আটকৃত ট্রাকটিতে তল্লাশি চালিয়ে ঘোষনা বহিরভূত পণ্য পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাতে বন্দরের ভেতর থেকে শুল্ক চুরির মিথ্যা ঘোষণার এ চালানটি আটক করে কাস্টমস সদস্যরা।বন্দরে ইনগট ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন পণ্য শুল্ক চুরির অভিযোগে আমদানিকারক মেসাস, কাই আলম ঢাকা পণ্য চালানটি আটক করেছে কাস্টমস সদস্যরা। আদানিকারকের পণ্যটি বন্দর থেকে ছাড় করাচ্ছিলেন সিএন্ডএফ এজেন্ট ট্রিম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।যার মেনিফেস্ট নং-২৬৩২০/৩ তাং০২/ ১১/২০ বি/ই নং-৫৩০৭৮ তাং ০৯/১১/২০। অন্য চালানটির মেনিফিষ্ট ও বি/ই নাম্বার নেই। একটির থাকে অন্যটির থাকে না কেন।এটা কি কৌশলে শুল্ক চুরি নয়।
আটকৃত ট্রাকে ইনগটের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের কনসাইনমেন্ট পণ্য দেখতে পাই।ইনগট কনসাইনমেন্টের কাগজ থাকলেও অন্য পণ্যের কোন কাগজ পত্র নেই।কাগজ পত্র বিহীন পণ্যের মধ্যে রয়েছে,থ্রি পিছ ,উন্নত মানের শাড়ী,লেহেঙ্গা,পাজ্ঞাবি,থান কাপড়,ফস কাপড়,সার্জিক্যাল আইটেম ও মেডিসিন পণ্য। ৩৯শেড থেকে ইনগট পণ্যটি ট্রাক লোড করে ট্রিম ট্রেড নামে একটি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন উঠেছে একই ট্রাকে কি করে ভিন্ন পণ্য ওঠলো । যার একটি ট্রাকে ঘোষনা বহিীন পণ্য কি করে গাড়িতে ওঠলো।এটা কি শুল্ক চুরির একটি অভিনব কৌশল নয়।
কাস্টমস সূত্রে জানায়, গোপন খবর আসে ইনগট ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পণ্য ও মেডিসিন গাড়িতে লোড করে বন্দর ত্যাগ করানোর চেষ্টা চলছে। পরে কাস্টমস সদস্যরা অভিযান চালিয়ে বন্দর থেকে ট্রাকটি আটক করে। পরে ট্রাকটিতে তল্লাশি চালিয়ে ঘোষনা বহিরভূত পণ্য পাওয়া যায়।
৩৯ নম্বরে শেড ইনচার্জ শহিদুল জামান লিটন তথ্য দিতে অপরগতা গড়িমল করতে থাকে।সাংবাদিক দেখে যারা এ ২নাম্বর কাজে জড়িত তাদের সাথে গোপনে কথা বলতে দেখা যায়।অবশেষে তিনি জানান, শেডের খোলা মাঠের মধ্যে থেকে ২০০টন ইনগট১৬ টি ট্রাক লোড হয়েছিল।খোলা মাঠ থেকে কি ভাবে চালানটির কোন সুনির্দিষ্ট কাগজপত্র না থাকায় ওই গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়া হয় কেন আমি জানি না। মাল রাতে মাঠে লোড হয় ,বেশিরাত পয়ন্ত থাকা হয় না সে জন্য আগে গেটপাশে সই করে দিই।ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য চালান টি হাসিনা এন্টারপ্রাইজের বর্ডারম্যান রায়হান আনলোড করেছিল।কিন্তু কোনটা ম্যানিফেস্ট কোনটি সিএন্ডএফ আমি কিছুই জানি না। আমার হাতে আছে শুধু ইনগটের চালান।
এবিষয়ে ট্রিম ট্রেড এর সত্বাধিকারি জানান,খোলা মাঠ থেকে মাল ট্রাক লোড করি ইন্ডাসটেরিয়াল পণ্য সেখানে কমারসিয়াল পণ্য খোলা মাঠে থাকে না।ইনগটের কাগজপত্র ছাড় করে ইনগট লোড করি।আমাদের ইনগট ছাড়া কোন পণ্য লোড করি নাই।গাড়ি লোডের পর গেটপাশ দিয়ে আসা হয় তার পর কি ভাবে অন্য পণ্য লোড হলো আমরা জানি না।যারা ২নাম্বার কাজ করে তারা ট্রাক ড্রাইভারের সাথে কারসাজি করে ঐ শেড থেকে এ মাল লোড করেছে। এর সাথে ৩৯ নং শেড ইনচার্জ জড়িত। বন্দরের মধ্যে তো ইসমাগলিন এর মাল থাকে ? সে বলতে পারবে কি ভাবে কোথা থেকে এলো।আমরা বন্দরে অনেক দিন ধরে সুনামের সাথে কাজ করে আসছি ,কমারশিয়াল পণ্যের কোন কাজ করি না।কাস্টমস সঠিক তদন্ত করে দোশী কে শ্বাস্তি আর নিদোষ কে ছেড়ে দেবার জোর দাবী জানাচ্ছি ।
জানা গেছে এই ঘটনাটি বন্দর উপ পরিচলাক মামুন কবির তরফদার বিষয়টি জানার পরও তিনি রহস্যজনক ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ রয়েছেন। তিনি কেন বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপও গ্রহন করেননি।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার অনুপম চাকমার কে ৩বার ফোন দিলে ফোন রিচিভ করেন নাই।
এদিকে,বন্দরে মিথ্যা ঘোষণার পণ্য চালান আমদানি বেড়েই চলেছে। কখনো কাস্টমস-বন্দরকে ম্যানেজ করে আবার কখনো বিভিন্ন পরিচয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে চলছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির উৎসব। তবে মাঝে মধ্যে দুই একটা চালান আটক হলেও অধিকাংশ থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরাও থেকে যায় আড়ালে। ফলে কোনোভাবে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি বন্ধ হচ্ছে না।
বন্দরের একটি সুত্র জানায় এ ভাবে অহরহ কাগজপত্র বিহীন বেনাপোল বন্দরে অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহযোগিতায় ভারত থেকে পণ্য প্রবেশ করে। যে পণ্যর সরকারী শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়। মাঝে মধ্যে দুই একটি পণ্য ধরা পড়লেও বড় অংশ চলে যায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে।
মোবাইল ০১৭১২৯৪৭৮৭১
তারিখ ১৬/১১/২০২০