মোঃ নজরুল ইসলাম যশোর জেলা প্রতিনিধি
ভারত থেকে বেনাপোবন্দরে আমদানীকৃত পণ্যের সাথে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে অবৈধ্য মাদকদ্রব্য। বন্দর এলাকার কিছু মাদকব্যবসায়ী বৈধ্য ব্যবসার আড়ালে এ অবৈধ্য ব্যবসায় জড়িত রয়েছে দীর্ঘি দিন ধরে। বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে অভিনব কায়দায় একটি চক্র আমদানি নিষিদ্ধ এসব পণ্য আনছে। সুকৌশলে বন্দর থেকে ছাড় করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। মাঝে মধ্যে এসব পন্যের দু একটি চালান আটক হলে বন্দর কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের মাঝে হইচই পড়ে। পরে দিন কয়েক যেতে না যেতেই এ নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামায় না।এই সুযোগে চক্রটি আবারো পুরানো কারবার শুরু করে।
বেনাপোল স্থলবন্দরে দুটি ভায়াগ্রার চালান আটক হওওয়ার পর আবারো সেই আলোচনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যারা বৈধ পণ্যের অন্তরালে মাদকদ্রব্য আনছে তাদের সাথে কাস্টমসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের রয়েছে মোটা অংকের টাকার ভাগাভাগি। সে কারণে কোনোভাবে এই অবৈধ কারবার বন্ধ হচ্ছে না। বেনাপোলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরের মামনি এন্টার প্রাইজ নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখা থেকে গত -১৭-৫-২০২১ তারিখে একটি এলসি খোলেন। যার নম্বর-০৮৮৬২১০১০৩৫৬। পন্য চালানটির ইনভয়েস নম্বর ডি,আই এম আই/০৫/২১-২২ তারিখ- -১১-৫-২১। সে অনুযায়ী ভারতের বনগার দ্রতি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি-রপ্তানিকারক এ পণ্যগুলো বাংলাদেশ পাঠায়। যা গত ৩১/৫/২১ তারিখে বেনাপোল স্থলবন্দরে আসে। চালানটির কাস্টম কার্গ মেনুফেস্ট নম্বর -১৯৭৮৮/১। ভারতীয় ট্রাক নম্বর-ডব্লু বি-৬৫ বি-০২১৭।
বেনাপোল বন্দরের ২০ শ্রমিক করোনা সংক্রমনের ঝুঁকিতে
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার অনুপম চাকমা জানান, গত ৩১ মে আমদানি কারক মটরপার্টস এন্ড আদার্স ঘোষণায় ভারত থেকে ৩০১ প্যাকেজ পণ্য আমদানি করেন। এই পন্যগুলো চেকপোস্ট কার্গো শাখা থেকে গ্রহণ করেন বেনাপোলের সি এন্ড এফ এজেন্ট আর্নিকা এন্টারপ্রাইজ। তারা পন্য বুজে পাওয়ার পর বেনাপোল বন্দরের ৪২ নাম্বার পণ্যগারে রাখেন। পরবর্তীতে কায়িক পরীণে দেখা যায় ৩০১ প্যাকেজের মধ্যে ১১৪ নাম্বার প্যাকেজে পাউডার জাতীয় পণ্য ২৬.২১ কেজি রয়েছে। পরে সেটি কাস্টমস হাউজের রাসায়নিক পরীাগারে নমুনা পরীা করে ভায়াগ্রা সনাক্ত হয়। আমদানিকৃত পণ্যটি যেহেতু আমদানি নিষিদ্ধ সেহেতু জনস্বার্থে নিরাপত্তার জন্য ৪২ নাম্বার পণ্যগার থেকে বন্দরের অনুমতি নিয়ে কাস্টমসের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারোর বিরুদ্ধে কোন সাজা মুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার ভায়াগ্রা চালান আটকের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন ,কাস্টমস এ সংক্রান্ত একটি পত্র তাদের দিয়ে পণ্য চালানটি নিজেদের জেম্মায় নিয়েছেন। পরবর্তী ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করবেন। এর আগে গত ২০ জুন বিকালে বেনাপোল বন্দরের ৪২ নাম্বার পণ্যগার থেকে ভায়াগ্রা চালানটি জব্দ করে কাস্টমস সদস্যরা। দুই দিন ল্যাবে পরীা শেষে প্রাথমিক পরীায় ভায়াগ্রা নিশ্চিত হয় কাস্টমস সদস্যরা। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভায়াগ্রা আমদানি করেন যশোরের মামনি এন্টার প্রাইজ। পণ্যটি বন্দর থেকে ছাড় করানোর চেষ্টা করছিলেন বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আমিন ইমপোর্টস এন্ড এক্সপোর্টস লি:। একটি সূত্র জানায়, আমিন এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্টের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এ রকম নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।
বেনাপোলের একাধিক সূত্র অভিযোগ করে বলেছেন,একটি চোরাচালাননি চক্র বৈধ ব্যবসার অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে শাড়ি থ্রি পিস কসমেটিকস ইমিটেশন জুয়েলারী ও মোটর পার্টসের চালানে করে ভায়াগ্রা মাদক ও মোবাইল সেট পাচার করে নিয়ে আসছে। এর আগে ২০১৯ সালে বেনাপোল বন্দরে সাড়ে ১২ কোটি টাকা মুল্যের আড়াই হাজার কেজি ভায়াগ্রা আটক করে কাস্টমস। অভিযোগ আছে যারা এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে তারা এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে দেদারছে। বিশেষ করে দেশে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এই চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড.নেয়ামুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারত থেকে আসা প্রতিটি পন্যের চালান অভিজ্ঞ কাস্টমস কর্ম কর্তযারা যথাযথ ভাবে পরীক্ষা করে থাকে। যার ফলে মাঝে মধ্যে ভারত থেকে পণ্য চালানের ভিতরে লুকিয়ে রাখা অবৈধ্য মাদকদ্রব্য ধরা পড়ে। প্রথমে সেগুলো কাস্টম হাউজে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষণে অবৈধ্য মাদকদ্রব্য সনাক্ত হলে সেগুলো আবার পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা থেকে পরীক্ষার পর মাদক প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট সিন্ডএফও আমদানীকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।