রাকিব হাওলাদার, ভোলা।।
করোনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পযন্ত কঠোর বিধিনিষেধ এর ঘোষণা দেন সরকার। কঠোর লকডাউন বন্ধ থাকার পরে পবিত্র ইদুল আজহা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পাড় করতে দেখা গেছে ভোলার কামারশালাগুলোতে। কামারশালার হাতুড়ির টুং-টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে ভোলা শহরের এবং হাট বাজারের কামারশালা গুলো। দীর্ঘ সময় ঝিমিয়ে থাকার পর কামার পল্লীর মানুষদের মাঝে কর্মচঞ্চল্যতা দেখা দিয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে দম ফেলানোর ফুরসত নেই তাদের। সারা বছর আয় না হলেও এই সময়ে বাড়তি আয়ের আশায় প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
রবিবার (১৮ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের মহাজনপট্রি কালিনাথ রায়ের বাজারের কামার পট্রি, পরানগঞ্জ বাজারের কামারশালা, ইলিশা হাট কামারশালায় কামাররা বিরতিহীনভাবে কাজ করছেন। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতারা কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য ছুরি, দা, বটিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম শান দেয়া ও কেনা নিয়ে ব্যস্ত। কালিনাথ বাজারের পরিমহল কর্মকার জানান, লকডাউন থাকার কারনে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ দা, বটির কাজ করাতে আসতে পারেনি এইদুইদিন মোটামুটি কাস্টমারের চাপ আছে। কিন্তু চাপ থাকলে কি হইবো কামারদের কোনো সংগঠন না থাকায় দাম পাচ্ছিনা। কাজেরও নেই নির্দিষ্ট কোনো রেট। ফলে কঠোর পরিশ্রম করেও ক্রেতাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক মূল্য পাওয়া যায়না।
পরানগঞ্জ বাজারের শিপু কর্মকার বলেন, লকডাউনের কারনে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকার ফলে বর্তমানে ঈদ সামনে রেখে কাজের চাপ বেশি থাকলেও বিদ্যুতের দাম, যন্ত্র তৈরির জ্বালানি কয়লার দামও বাড়তি। বর্তমানে এক মণ কয়লার মূল্য ৬০০-৭০০ টাকা। যন্ত্রপাতি তৈরির কাঁচামাল কিনতে হয় প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকায়। এক কেজি লোহার তৈরি একটি দা বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। কারিগর কালাচানঁ বলেন, এ পেশায় পরিশ্রমের চেয়ে মুনাফা অনেক কম। দিন-রাত আগুনের পাশে বসে কাজ করতে হয়। তারপরেও ক্রেতারা নায্য মূল্য দিতে চান না।
ইলিশা বাজারের তপন কর্মকার বলেন, দীর্ঘদিন সরকারি লকডাউন থাকার কারনে দোকান বন্ধ ছিলো কাজ করতে পারেনি খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাইছি। এহন একটু স্বস্থি লাগে লোকজন দা বটি শান দিতে আসে। লকডাউন থাকায় দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকার কারনে আজ দুইদিন কাজের চাপ আছে হাত খোছানোর পাইনা।
এ ছাড়া শহরের কিছু কিছু কর্মকাররা জানান, বর্তমানে কামারের তৈরি লোহার জিনিসের পরিবর্তে স্টিলের যন্ত্রপাতির দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করতে হচ্ছে।