ভোলা প্রেসক্লাব নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা: দ্রুত নির্বাচনের দাবী
বোরহানউদ্দিন উপজেলা প্রতিনিধি:(ভোলা)
দীর্ঘ ১০ বছর পর ভোলা প্রেসক্লাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও প্রথমেই হোচট খেয়ে স্থগিত হয়ে গেলো ভোলা প্রেসক্লাব নির্বাচন।
রবিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গিয়ে জানতে পারলো নির্বাচন স্থগিতের খবর। এর আগে ১০ ডিসেম্বর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিলো। তফসিল অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ২০ ডিসেম্বর দাখিল, ২১ ডিসেম্বর বাছাই, ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রত্যাহার এবং ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিলো। সে অনুযায়ী প্রেসক্লাবের ১১টি পদের বিপরীতে ২৭জন সদস্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
২০১৮ সালে নির্বাচন ছাড়াই এম হাবিবুর রহমান এবং অমিভাত রায় অপুর নেতৃত্বে প্রেসক্লাবের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। সেই কমিটির সদস্যরা এবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। এছাড়া তরুণ সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামস-উল আলম মিঠু সভাপতি, ওমর ফারুক ও আল আমিন শাহরিয়ার সাধারণ সম্পাদক, মোকাম্মেল হক মিলন সহসভাপতি, হারুন অর রশিদ সহ-সাধারণ সম্পাদকসহ ৮জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
অন্যদিকে এডভোকেট নজরুল হক অনু সভাপতি, এডভোকেট মোঃ কামাল উদ্দিন সুলতান সহ-সভাপতি, এডভোকেট সাহাদাত হোসেন শাহিন সাধারণ সম্পাদক, শিমুল চৌধুরী সহ-সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী তুহিন নির্বাহী সদস্যসহ অন্যান্য পদেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। নির্ধারিত সময়ে তারা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন এর কাছে জমা দিতে গেলে সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান তার কার্যালয়ে নির্বাচন স্থগিতের নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ভোলা প্রেসক্লাবে এ ধরনের কোন নোটিশ দেয়া হয়নি।
উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে নির্বাচন বন্ধের নোটিশ দেখে হতবাক হয়ে যান প্রেসক্লাব সদস্য এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা। হঠাৎ করে বিনা কারণে এ ধরণের স্থগিতাদেশ দেখে অনেকেই এ ঘটনাকে ডিজিটাল যুগের টোনাটুনির গল্প বলে মন্তব্য করেন। যদিও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নোটিশে উল্লেখ করেছেন প্রেসক্লাবের সদস্য আবদুস সহিদ তালুকদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার ভোটাধিকারের বিষয়টি নিস্পতি না হওয়ায় আপাতত ভোট স্থগিত করা হলো। শহীদ তালুকদার নিয়মিত প্রেসক্লাবের চাঁদা পরিশোধ না করায় বর্তমান কমিটি ভোটার তালিকায় তিনিসহ ৬ জনের নাম অর্ন্তভুক্ত করেনি। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে শহীদ তার ভোটাধিকার ফেরৎ পাবার দাবী করে। তার দাবীর প্রেক্ষিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে ভোট স্থগিতের ঘটনায় প্রেসক্লাবের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ করে। দ্রুত নির্বাচনের দাবী জানায়। নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী এডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, ২০১০ সালের পর ভোলা প্রেসক্লাবের কোন নির্বাচন হয়নি। এবার নির্বাচনের একটা ঘোষণা হওয়ায় সাংবাদিকরা উৎসবমুখর হয়েছিলো, সে জন্য আমরা সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরী করেছি। বর্তমানে তো ভোট বন্ধ হয়নি, স্থগিত হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আমরা ভালো করে প্রস্তুতি নেবার সুযোগ পাবো। তাছাড়া আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সাধারণ সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এডভোকেট সাহাদাত হোসেন শাহিন বলেছেন, যখন পুরো প্রেসক্লাব নির্বাচনমুখী তখন হঠাৎ করে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া অযৌক্তিক। নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ায় সাংবাদিকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানান। প্রকৃত সাংবাদিকদের নিয়ে ক্লাবকে কার্যকর এবং গতিশীল করা যায় সেজন্য ভোলার অভিভাবক জননেতা তোফায়েল আহমেদ এর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সভাপতি পদপ্রার্থী সামস-উল আলম মিঠু বলেন, ঐতিহ্যবাহী ভোলা প্রেসক্লাব বিগত ৫০ বছর ধরে সাংগঠনিক চর্চার ধারাবাহিকতাকে যেভাবে সমন্বত রেখে আসছিলো বর্তমানে সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় ৩য় একটি পক্ষ প্রেসক্লাবকে প্রভাবিত করার সুযোগ পেয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ যাতে এ ধরণের সুযোগ না পায় সে জন্য সাংবাদিকদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সময় উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আল আমিন শাহরিয়ার বলেন, যে সদস্য তার ভোটাধিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তিনি ভোট বন্ধের দাবী করেননি। অথচ নির্বাচন কমিশন ভোট বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়া সত্ব্যেও রহস্যময় কারণে ভোট বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি এজিএম এর দিন নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগেরও দাবী করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন জানান, ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত না হওয়ায় একজন সদস্য তার ভোটাধিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। প্রেসক্লাবের সভাপতি-সম্পাদকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বক্তব্য পাওয়ার পর বিষয়টির নিস্পত্তি করে ভোটের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।