মডেল রোমানা প্রতারণা করে ২৮ জনকে বিয়ে করেছেন- হাকিকুল ইসলাম খোকন
যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃ রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। নিজেকে কখনো মডেল, কখনো অভিনেত্রী পরিচয় দিতেন। খুলতেন আলাদা আলাদা ফেসবুক আইডি। এরপর প্রবাসীদের টার্গেট করে ফ্রেন্ড বানিয়ে গড়ে তুলতেন প্রেমের সম্পর্ক। তারপর কখনো স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ আবার কখনো স্বামীহীন সংসারে আর্থিক অনটনের কথা বলে প্রবাসী ওই প্রেমিকদের কাছ থেকে নিতেন টাকা।
ঠিক একইভাবে কখনো ফ্ল্যাট কেনা আবার কখনো গাড়ি কেনার নাম করে রোমানা সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলের কাছ থেকে এক বছরে বিভিন্ন সময়ে নেন আড়াই কোটি টাকা। এরপর একসময় ক্লান্ত হয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন এই মডেল-অভিনেত্রী।
বাংলাদেশের বিনোদন-জগতে এখন টক অব দ্য শোবিজ মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণার জীবনের গল্প! ঠিক যেন হার মানিয়েছে সিনেমার কাহিনিকেও। ১১ মার্চ বৃহস্পতিবার রোমানাকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, রোমানা অভিনেত্রী ও মডেল পরিচয়ে ফেসবুকে প্রেম করতেন শুধু প্রবাসীদের সঙ্গে। কখনো ডিভোর্সি আবার কখনো সংসারের আর্থিক সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে নিতেন টাকা। পরে সময় বুঝে করতেন বিয়েও। কৌশলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লিখে নিতেন জায়গা-জমিও।
তার সঙ্গে প্রেম করতে গিয়ে প্রতারিত হওয়া এমন কিছু ভুক্তভোগীর দাবি, রোমানা এ পর্যন্ত মোট ২৮ জনের সঙ্গে এভাবে বিভিন্ন প্রতারণা করে বিয়ে করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পুলিশ বলছে, তার পরিবারের প্রতিটি সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
এদিকে ১২ মার্চ শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রোমানাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তারের আদালতে তোলা হলে তার রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে এক দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সাবেক স্বামীর কাছ থেকে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে লালমাটিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানান, সৌদি প্রবাসী সাবেক স্বামীর মামলায় রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন রোমানার মা আশরাফি ইসলাম শেইলী (৬০), রোমানার ছেলে আন্নাফি ইউসুফ ওরফে আনান (২০) এবং নাহিদ হাসান রেমি (৩৬), ফারহা আহম্মেদ (৩০) ও অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক (৩৭)।
এদিকে রোমানার কাছ থেকে প্রতারিত হওয়া স্বামী প্রবাসী কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, রোমানা তার সঙ্গে প্রথমে ভালো সম্পর্ক করে। তারপর লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট কেনার নাম করে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। কামরুল বলেন, ‘আমি দেশে আসার পর আমাকে বাসায় ডাকে। আমি যাই। গেলে তারা আমাকে কিছু একটা খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর আমার খারাপ ছবি তুলে নেয় ও আমার থেকে স্ট্যাম্পে সাইন নিয়ে নেয়। এভাবেই সে আমাকে জোর করে বিয়ে করে। তার মোবাইল, ঘড়ি, গাড়ি সবই আমার কিনে দেওয়া। আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে বললেও তা মিথ্যা। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’
পুলিশ জানায়, এই পরিবারের প্রতিটি সদস্যই জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িত। তারা বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে একই প্রক্রিয়ার প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কের অভিনয় করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে জানান, রোমানা, তার মা, তার ভাই ও ভাইয়ের বউ এবং রোমানার ছেলে তারা সবাই এই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তিনি বিদেশ থেকে আসার পর তাকে বাসায় নিয়ে বিবস্ত্র করে তার ছবি তোলে তারা। এরপর টাকা দাবি করে বসে। টাকা না দিলে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
Leave a Reply