আরিফুর রহমান,মাদারীপুরঃ ৩১ মার্চ মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা
হয়েছে। বুধবার জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান এ
তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এ পৌরসভা নির্বাচনের
ভোট গ্রহণের কথা ছিল। নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ও
নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় ভোট গ্রহণের তিন দিন আগে
নির্বাচন স্থগিত করেছিল নির্বাচন কমিশন। তদন্তে পুলিশের বিষয়টি
সমালোচিত হওয়ায় জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান ও কালকিনি
থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধাকে অনত্র বদলি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নিবাচন
কমিশনের নির্বাচন পরিচলনা -২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান এ
সংক্রান্তে ১৬ মার্চ মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নির্বাচনী প্রচারণা
চালাচ্ছিলেন মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মসিউর রহমান
সবুজ। বিকেল চারটার দিকে মসিউরের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল করেন মাদারীপুরের
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। তাৎক্ষণিক সেখানে কালকিনি থানার
ওসি নাছির উদ্দিন গাড়ি নিয়ে হাজির হন। পরে সেখান থেকে তাঁকে পুলিশের
গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই নিখোঁজ হন মসিউর। প্রতিবাদে
বিক্ষোভ নিয়ে কালকিনি থানা ঘেরাও করেন তাঁর সমর্থকেরা। টায়ার জ্বালিয়ে
রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেয় তার সমর্থকরা। কালকিনি-ভুরঘাটা-মাদারীপুর
আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভ মিছিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে
হামলা চালান নৌকার প্রার্থী এস এম হানিফের সমর্থকেরা। পরে দুই পক্ষের
সংঘর্ষে আহত হন প্রায় অর্ধশত মানুষ। আহতদের উদ্ধার করে মাদারীপুর জেলা সদর
হাসপাতাল ও কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে বেশ
কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ,
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।
নিখোঁজের ১১ ঘণ্টা পর শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে কালকিনি পৌরসভার দক্ষিণ
কৃষ্ণনগর নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন মসিউর রহমান সবুজ। এর পরপরই
আলোচনায় উঠে আসে কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনের বিষয়টি। এ বিষয়
একাধিক সংবাদ প্রকাশ হলে ঘটনাটি নির্বাচন কমিশনের নজরে আসে।
পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারী নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। গত ১৮
ফেব্রুয়ারি কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক হুমায়ুন
কবিরকে প্রধান করে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
দতন্ত কমিটি চলতি মাসে প্রথম সপ্তাহে মাদারীপুরে আসে। তদন্তে পুলিশের
বিষয়টি সমালোচিত হওয়ায় জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান ও
কালকিনি থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধাকে অনত্র বদলি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ
১৬ হাজার ৮৬৬ জন ও মহিলা ভোটার ১৬ হাজার ৪৪১ জন।
জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কমিশন
থেকে করা তদন্ত কমিটি পুলিশ সুপার বা ওসির ভুল ত্রুটি পায়নি। তবে, পুলিশের
ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের অনত্র বদলি করেছে।
বর্তমানে নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক ও অনুকূলে থাকায় ৩১ মার্চ
নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি
নির্বাচন আমরা কালকিনিবাসীকে উপহার দিতে পারবো।
আরিফুর রহমান মাদারীপুর
১৭–০৩–২০২১