মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে-শান্তি আলোচনার—পুতিন——————————————————হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃতুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে যে শান্তি-সংলাপ চলছে, তা আর বেশিদূর এগোবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের রাজধানী বুচা শহরে গণহত্যা নিয়ে পশ্চিমা দেশসমূহ ‘ভুয়া সংবাদ’ ছড়াচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাজধানী মস্কো থেকে ৫ হাজার ৫৬০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ভস্তোশনি কসমোড্রোম পরিদর্শনে যান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সাবেক সোভিয়েত আমলে তৈরি করা হয়েছিল এই উৎক্ষেপণ কেন্দ্রটি।সেখানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, ‘(শান্তি সংলাপে) এখন নিরাপত্তা বিষয়ক শর্তসমূহ আলোচনা হচ্ছে এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে— কোনো শান্তিচুক্তি যদি প্রণয়ন করতে হয়, সেক্ষেত্রে ক্রিমিয়া, সিভাস্তপোল ও দনবাস (দনেতস্ক ও লুহানস্ক) আর ইউক্রেনের সীমানায় নেই— এটি সেখানকার সরকারকে মেনে নিতে হবে।’সুতরাং দেখা যাচ্ছে আমরা আবার সেই জায়গাতেই ফিরে যাচ্ছি, যেখান থেকে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এই আলোচনার মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে এবং এটা সম্ভবত আমরা সবাই আঁচ করতে পারছি।তবে এই যুদ্ধের একটি ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে এবং বিশ্ব রাজনীতি কৌশলগত দিক থেকে বিবেচনায় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন পুতিন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শীতল যুদ্ধের অবসানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে এককেন্দ্রীক আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, তা ভেঙে পড়ছে। এটিই এ যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য।’
‘তবে তাৎপর্য যাই হোক, সত্য হলো— যুদ্ধ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। কারণ, আমাদের সাবেক এই সোভিয়েত প্রতিবেশী (ইউক্রেন) রাশিয়ার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের ঘাঁটিতে পরিণত করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’
‘তবে আমাদের শত্রুদের পরিকল্পনা কখনও সফল হবে না। মূল ব্যাপার হলো, যুক্তরাষ্ট্র ঠিক ততদিনই রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত থাকবে, যতদিন ইউক্রেন থাকবে।’
বুচা শহরে হত্যাকাণ্ড নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ‘ভুয়া তথ্য’ ছড়াচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন পুতিন। সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ‘যখন মার্কিন বিমান বাহিনী সিরিয়ার রাক্কা শহরে গোলাবর্ষণ করেছিল, আপনারা কেউ কি দেখেছিলেন, কী অবস্থা হয়েছিল শহরটির। কয়েক মাস লেগে গিয়েছিল কেবল ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করতে।’
‘কিন্তু তখন কেউ টুঁ শব্দটিও করেনি? এমনকি অনেকে খেয়ালই করেনি।’
‘কিন্তু মার্কিনীরাই পরে অভিযোগ তুলল— বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকার সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দমনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। পরে অবশ্য জানা গেল— সেটি ছিল ভুয়া খবর।’
‘বুচা শহরের গণহত্যোর খবরও সেরকমই, অর্থাৎ ভুয়া খবর।’
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ নির্দেশ প্রদানের ২ দিন আগে, ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই এলাকা দনেতস্ক ও লুহানস্ককে (দনবাস) স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
বুধবার ৪৮তম দিনে পৌঁছেছে রুশ বাহিনীর অভিযান। শুরুর দিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে তৎপরতা চালালেও বর্তমানে মূলত দেশটির দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলেই মনযোগ দিচ্ছে রুশ বাহিনী। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর মারিউপোলে ইতোমধ্যে ১ হাজারেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছে বলে বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।