বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দেওয়া ঘর নিজের শ্বাশুরি ও শালিকার নামে ভাগিয়ে নিয়ে প্রথমে সমালোচনার মুখে পড়েন ইউপি মেম্বর আব্দুল হালিম হাওলাদার। এরপর জেলে নন এমন সব লোকদের জেলে কার্ড বিতরণ, পানির ট্যাঙ্কি দেয়া বাবদ টাকা নেওয়া ও বিধবা কার্ড দিতেও টাকা চেয়ে বসেন মেম্বর হালিম। এসব অভিযোগ মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বর) আব্দুল হালিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদারও বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছেন তার এই অনিয়মের কথা। তবে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তার এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার চিলা ইউনিয়নের চিলা বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নানা অনিয়মের অভিযোগে মেম্বর হালিমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। এ সময় পেশাদার জেলে অমল মন্ডল (৪০), রবি রায় (৩৫) ও উৎপল মন্ডল (৪৯) অভিযোগ করে বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর পশুর নদীতে মাছ ধরে জীবন-জীবিকা চালান তারা। তাদের জেলে কার্ডও আছে, কিন্তু সরকারী ত্রাণ কখন দেয়নি মেম্বর। তার (মেম্বর) কাছে গেলে বলে এখন না, পরেরবার দেয়া হবে। তবে জেলে কার্ড নেই এমন কিছু মেম্বরের কাছের লোককে জেলে কার্ডের স্লিপ দেওয়া হয়েছে। তারা এরই মধ্যে চালও উঠিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। জেলে না হয়ে মেম্বরের লোক হওয়ায় এ সুবিধা নিচ্ছেন তারা। একই এলাকার তাপস রায় বলেন, তার বাবা মারা গেছেন ১৯ বছর আগে। এরমধ্যে তার মায়ের একটা বিধবা কার্ড এমনকি বয়স্ক ভাতারও কার্ড করাতে পারেননি। মেম্বর হালিমের গেছে গেলে ৩ হাজার টাকা চাওয়ায় আজও সেই কার্ড হয়নি বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন তাপস। এদিকে শংকর রায়, অসিত রায়, বেল্লাল সরদার ও বেলায়েত সরদারসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, মেম্বর বিরুদ্ধে কেন বিক্ষোভ করবো না বলেন? আমরা তাকে ভোট দিয়ে মেম্বর বানিয়েছি। অথচ এই এলাকার প্রকৃত জেলে, বিধবা ও অসহায় লোকদের কোন ত্রাণ সহায়তা দেয়নি সে। সব তার নিজের লোকদের দিয়ে দেন। সরকারী ঘর দেওয়া বাবদ তার (মেম্বর) দালাল আলম ওরফে বর্শিওয়ালা আলম ও আনোয়ারের মাধ্যমে চিলার কলাতলা এলাকার দেব প্রসাদ মিস্ত্রি, অমর মিস্ত্রি, খোকন সরদার ও মনিরুল সরদারের কাছ থেক চার হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। আজ চার বছরেও তাদের কপালে সেই ঘর মেলেনি। এনিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন তারা। চিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী আকবর হোসেন এমন অভিযোগ পেয়েছেন স্বীকার করে বলেন, বর্শিওয়ালা আলমের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা এরিমধ্যে ফেরত নিয়ে একজনকে দিয়েছেন। আর তার ইউনিয়নের সদস্য আব্দুল হালিম হাওলাদারের বিষয়ে বলেন, মেম্বরি করতে গেলে কিছু ভুল ত্রুটি হয়, তবে হালিম ভাল লোক, দুইবারের মেম্বর সে বড় কোন দুনর্ীতি করেন বলে সাফাই গেয়ে চেয়ারম্যান আরও বলেন, এলাকার প্রতিপক্ষ চক্র হালিমকে হেয় করতে কিছু অভিযোগ তুলছেন। তবে ইউপি মেম্বর আব্দুল হালিম হাওলাদার বলেন, তিনি কোথাও কোন অনিয়ম করেননি। নিজের শ্বাশুরী ও শালিকার নামে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর কিভাবে নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আত্নীয় স্বজনরা গরীব হতে পারেনা? এটা উপজেলা প্রশাসন ভাল বলতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, হালিম মেম্বরের আত্মীয় স্বজনের ঘর দেওয়ার সময় আমি এখানে দায়িত্বে ছিলাম না। তারপরও তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে অনেকের কাছ থেকে শুনেছি, লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।