বায়জিদ হোসেন, বাগেরহাট:
মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকা কয়লা বোঝাই ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজের নিখোঁজ ২ নাবিকের মধ্যে এক মাস ২দিন পর লস্কর জিহাদ (২১) নামের এক নাবিকের লাশ উদ্ধার করেছে ডুবন্ত কার্গো উদ্ধারকারী ডুবুড়ী দল। বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়া এলাকায় কার্গোটি উদ্ধার কাজে সংশ্লিষ্ট ডুবুড়ি দল এ লাশটি জাহাজের মধ্যে থেকে উদ্ধার করে। এ নিয়ে মোট ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলো। এখনও নিখোঁজ লস্কর হামিদ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মোংলা থানার ইমার্জেন্সি কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বজিৎ মুখার্জী। নিখোজ লস্কর আঃ হামিদ (৬০)’র লাশের এখনও সন্ধান মেলেনি। উদ্ধার হওয়া নাবিক জিহাদ পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর ভিটা বাড়িয়া গ্রামের মঞ্জু মার্কেট এলাকার আলোম হাওলাদারের ছেলে। জিহাদের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা শুক্রবার সকালে ভান্ডারিয়া এলাকা থেকে রওয়ানা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। গত ১৫ নভেম্বর সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বন্দরের একটি বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ থেকে কয়লা বোঝাই করে ছেড়ে আসার সময় অন্য একটি বানিজ্যিক জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় কয়লা বোঝাই কার্গো জাহাজ এমভি ফারদিন-১। এসময় ওই কার্গোতে থাকা ৭ নাবিকের মধ্যে রিয়াজ ও রায়হান এ দুইজন সাতরিয়ে কিনারে উঠতে পারলেও গ্রিজার ও সুকানীসহ ৫জন নিখোজ হয়। মোংলা থানার পুলিশ জানায়, ৬শ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকার ৯ নম্বর এ্যাঙ্কারেজ বয়া থেকে ছেড়ে আসা কার্গো জাহাজ এমভি ফারদিন-১ ঢাকার গাবতলী জাওয়ার জন্য মোংলা শহরের ঘষিয়াখালী চ্যানেলেরর দিকে আসতে ছিল। এসময় অপর দিক থেকে আসা একটি বানিজ্যিক জাহাজ বন্দর ত্যাগ করে সাগরের দিকে যাওয়ার সময় সংঘর্ষ হয়ে মুহুর্তের মধ্যে কার্গো জাহাজটি ডুবে যায়। এ সময় মাস্টার, সুকানী ও ড্রাইভারসহ ৭ নাবিক কার্গো জাহাজেই অবস্থান করছিল। ডুবে যাওয়া জাহাজে থাকা ৭ নাবিকের মধ্যে দুই জন সাতরিয়ে কিনারে উঠতে পারলেও গ্রিজার ও সুকানীসহ ৫জন নাবিক নিখোজ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের পৃথক দল দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সোমবার সারা রাত ও মঙ্গলবার দিনভর উদ্ধার অভিযান চালায় নৌ-পুলিশ ও মোংলা কোষ্টগার্ড সদস্যরা। পরের দিন বিকালে কার্গোটি ডুবে যাওয়া স্থান থেকে হারবাড়িয়া এলাকার কিছুটা দক্ষিনে দুই জনের লাশ ভেসে উঠলে তখনই কোস্টগার্ডের ডুবুড়ি দল লস্কর মইন উদ্দিন ও গ্রীজার নুর ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার ৫দিন পর গত ২১ নভেম্বর দুপুরে রবিউল নামের এক লস্করের লাশ উদ্ধার করা হয়। সে সময় থেকেই দুই জনের লাশের সন্ধানের আশা ছেড়ে দিয়েই উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষনা করে পুলিশ ও কোষ্টগার্ড সদস্যরা। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর ডুবন্ত কার্গোটি উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারী জাহাজ ও ডুবুড়ি দলের সাথে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ায় উদ্ধার কাজ শুরু করে কার্গো মালিক পক্ষ। ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার গভির রাতে ওই ডুবন্ত জাহাজের ভিতরে আটকে থাকা জিহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই ডুবন্ত কার্গোটি সম্পুর্ন ভাবে উদ্ধার করতে পারলে নিখোজ নাবিক হামিদের লাশও উদ্ধার কার সম্ভব হবে বলে আশা করেন ভাই ভাই স্যালভেস কোম্পানীর ডুবুড়ি দলের প্রধান আঃ সাত্তার। উল্লেখ্য,মোংলা পশুর চ্যানেলে ৯ নম্বর এ্যাঙ্কারেজ বয়ায় নঙ্গর করা ২০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই মাল্টার পতাকাবাহী বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ এম,ভি এলিনা-বি থেকে কয়লা বোঝাই করে ডুবন্ত কার্গো জাহাজটি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নঙ্গরে অবস্থানরত বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ থেকে প্রায় ৬শ’ মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই করে রাতে এমভি ফারদিন-১ কার্গো জাহাজটি মোংলা বন্দর অভিমুখে আসার পথে অন্য একটি বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজের সাথে সংঘর্ষে কয়লা নিয়ে ডুবে যায় কার্গো এমভি ফারদিন-১।
Leave a Reply