বাগেরহাট প্রতিনিধি:
দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে মোংলা-খুলনা মহাসড়ক। সামান্য বৃষ্টি পড়লেই মনে হয় রাস্তাগুলি যেনো ধান বোনার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। খানাখন্দে ভরা এ সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রায়শই ঘঠছে দুর্ঘটনায়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। ভুক্তভোগীরা সড়কের এমন বেহালদশার জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন। এই সড়কের নীরব কান্না যেন কেউই যেন শুনছেনা। নিরবে কাঁদছে মোংলা-খুলনা মহাসড়ক। সংশ্লিষ্ট সুত্রের মতে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। এ বন্দরে আমদানী-রপ্তানী পণ্যসহ স্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা উৎপাদনমূখী ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্থলপথে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম মোংলা-খুলনা মহাসড়ক। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার স্থান এ মোংলা, এখান থেকেই খুব সহজেই সুন্দরবনে ঘুরতে পারেন। মহাসড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৫ কিলোমিটার এবং ৫ কিলোমিটার মোংলা বন্দরের আওতায়। এর মধ্যে বেলাই ব্রীজ হতে দিগরাজ বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক বিভাগের এবং দিগরাজ বাজার থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার মোট ১০ কিলোমিটার খানাখন্দে পরিনত হওয়ায় নানা দুর্ভোগে পড়ছে হাজার হাজার পন্যবাহীসহ সকল প্রকার যানবাহন ও পথচারীরা। এছাড়া খুলনা মোংলা মহাসড়কে কুদির গাঁছতলামোড়, লখপুর এলাকার কিছু অংশ, কাটাখালি মোড়, শ্যামবাগাত, চুলকাঠি এলাকার কিছু অংশ, সোনাতুনিয়া বাসস্ট্যান্ড, ভরসাপুর, খানজাহান আলী বিমানবন্দর এর সামনে বেশ কিছু অংশ ফয়লা বাজার পর্যন্ত ভাগা বাজার,চেয়ারম্যান মোড়সহ রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রবেশ দ্বার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত মহা সড়কটির অধিকাংশ স্থানের ছোট বড় গর্ত ও খানাখন্দ রয়েছে। এ সড়কে চলাচলকারী বাস চালক কবির বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে যায়। ভারি যানবাহন চলাচল করায় সড়কের সংস্কার কাজ বেশী দিন টেকে না। এতে নানা ভোগান্তির পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গাড়ির চাকা ও যন্ত্রাংশ। ইপিজেডে কর্মরত এক শ্রমিক বলেন, আমরা মটরসাইকেলে এই সড়কে চলাচলকরি, নিয়মিত গতানুগতিক মেরামত কাজ চললেও ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে আবার ভেঙ্গে যায়। এতে প্রায়ই আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে দূর্ঘটনার স্বীকার হই। ভাংগার মধ্যে দিয় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে গেলে পেছন থেকে আসা ভারি যানবাহনের দ্বারা জীবননাশের মত দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থেকে যায়। তাই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো দ্রুত যেন এই সড়কটি মেরামত করা হয়।
বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী আজিম কাওসার বলেন, ২২ ফুট চওড়া ও সরুথাকা সড়কটিতে একলেনে গাড়ি চলে। এ কারনে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষার কারণে বিটুমিনের কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সোলিং এইচ বি'র কাজ ( ইটের সোলিং) চলছে। বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন, খুলনা-মোংলা জাতীয় মহাসড়কের বাগেরহাটের দৈঘ্য ৩০ কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে বেলাই ব্রীজ থেকে দিগরাজ বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত। বর্ষা মৌসুমে বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রধান বা অন্যতম কারণ হচ্ছে ওভারলোড। এছাড়া ১৯৮৪ সালে সড়কটি নির্মাণ কাজ হওয়ার পর থেকে অদ্যবদি পুনরায় নির্মাণ এবং প্রশস্তকরণ করা হয়নি। বর্তমানে সড়কটিতে যানবাহন চলাচলের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে আমরা রুটিন মেইন্টন্সের আওতায় এর কাজ করবো। এদিকে চলমান সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করতে একটি প্রস্তাবনা তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা। তিনি আরও বলেন,বন্দর এলাকার আওতাধীন বাসস্ট্যান্ড থেকে দিগরাজ পর্যন্ত মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার সংস্কার কাজ কর্তৃপক্ষ দেখভাল করে থাকে। তবে সড়কের বর্তমান যে বেহালদশা তার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ খুব বেশি দায়ী নয়।বন্দর এলাকায় গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভারি পন্য পরিবহনের জন্য সড়কের ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক ও যানবাহন চলাচল করায় সড়কটি সংস্কার করলেও দূর্ভোগ লাঘোব হচ্ছে না। এছাড়াও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে পানি জমে সড়কে খানাখন্দ তৈরী হচ্ছে বলেও জানান বন্দর চেয়ারম্যান।
রাস্তায় অনেক ছোট বড় গর্ত থাকার কারণে মোটরসাইকেল বা ছোট যানবাহন নিয়ে যাতায়াতের সময় নানান দুর্ঘটনার স্বীকার হতে হয়। মোংলা-খুলনা মহাসড়কের এই করুন পরিনতি যেন পিছু ছাড়ছেনা নিয়মিত এই সড়কটি ব্যবহারকারীদের। তাই সড়ক ব্যবহারকারী সকলের দাবি অতি দ্রুত সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ করে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে এই সুষ্ঠ সমাধান এখন সকলের প্রত্যায়।