হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধি-
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামি শহরের সমুদ্রতীরবর্তী উপশহর সার্ফসাইডে ভবনধসের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। তাদের মধ্যে চার জনের পরিচয় ইতোমধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন ১৫০ জন। ভবনটির ধ্বংস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছেন তারা। রোববার মায়ামি-ডাড-এর মেয়র ড্যানিয়েলা লেভিন কাভা সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন। ড্যানিয়েলা কাভা বলেন, ‘ধ্বংসস্তুপের ভেতরে যারা চাপা পড়ে আছেন, তাদের সবাই এখনও মারা যাননি বলেই আমরা আশা করছি। আমাদের মূল লক্ষ্য তাদের উদ্ধার করা।’
বুধবার(২৪ জুন) রাত ১ টার দিকে মিয়ামির উত্তরাংশের সার্ফসাইড এলাকায় আকস্মিকভাবে ধসে পড়ে চ্যাম্পলাইন টাওয়ার নামের ১২ তলা ওই আবাসিক ভবনের অর্ধেক অংশ। ভবনটির অধিকাংশ বাসিন্দা তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। ১৯৮০ সালে নির্মিত সেই ভবনটিতে ১৩০ টি ইউনিট ছিল। ধসের ফলে ১৩০ টি ইউনিটের অর্ধেক, অর্থাৎ ৬৫ টি ইউনিটই তছনছ হয়ে গেছে।
সার্ফসাইডের মেয়র চার্লস বারকেট শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘ভবনের পেছনের দিকে, এক তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি অংশ সম্পূর্ণ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।’
মায়ামির সমুদ্রতীরবর্তী এই ভবনটি ঠিক কী কারণে ধসে পড়ল তা এখনও স্পষ্ট না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাণশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চ্যাম্পলাইন টাওয়ারের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে বাসিন্দাদের আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল।
২০১৮ সালের এই টাওয়ার সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি আলোয় এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভবনটির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপণায় বড় ধরনের ত্রুটি ছিল।
ভবনটির নির্মাণবিষয়ক উপদেষ্টা প্রকৌশলী ফ্রাঙ্ক মোরাবিটোর করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় সমস্যা ছিল । প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আসল চুক্তির কাগজে এই পদ্ধতিগত ইস্যুটির উল্লেখ ছিল, যেটা পুরো ঘটনার শুরু হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সুইমিংপুলের নিচের সিমেন্টের ভিত্তিকে তিনি ‘বড় ধরনের কাঠামোগত বিপর্যয় হিসেবে দেখছেন। প্রতিবেদনে ফ্রাঙ্ক মোরাবিটো লিখেছেন, ‘পানি বের হওয়ার যথাযথ জায়গা না থাকাটা একটা বড় ধরনের কাঠামোগত ত্রুটি। এর ফলে কংক্রিটের অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে এবং এই কাঠামো প্রসারিত হতে পারে।’
এই প্রকৌশলী পার্কিং গ্যারেজের দিকে কলাম, বিম ও দেয়ালে প্রচুর ফাটলের কথাও উল্লেখ করেছেন। ৪০ বছর পুরনো এই বিল্ডিং যে সহসাই ধসে পড়বে এমন কিছু ছিল না রিপোর্টে, কিন্তু কংক্রিটের যেসব জায়গায় অবনতি হয়েছে সময়মতো ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ ছিল।
তবে ফ্লোরিডার নির্মাণ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, এটি নিশ্চিত নয় যে কোনো মেরামতের কাজ হয়েছে কি না, কিংবা এই কাঠামোগত বিপর্যয়ের পেছনে রিপোর্টে উল্লেখ করা কারণই দায়ী কি না।
চ্যাম্পলেইন টাওয়ার্সে এই বছর কয়েক লাখ ডলারের একটা সংস্কার কাজ হওয়ার কথা ছিল। ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস ভবন ধসের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।