সৌমেন মন্ডল, রাজশাহী ব্যুরোঃ
বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের 'বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন' প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শনিবার (২৩ এপ্রিল) রাজশাহীতে একটি কমিউনিটি অ্যাওয়ানেস সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বল করে দেশের নৃগোষ্ঠী ভাষাগুলোর প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা সংগ্রহ করে তার মাধ্যমে ডিজিটাল রিসোর্স রিপোজিটরি তৈরি করা হবে জানানো হয়।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর “গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ” প্রকল্প (ইবিএলআইসিটি) কর্তৃক আয়োজিত দিনব্যাপি এই সভার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিসির নির্বাহী পরিচালক ড. মো. আব্দুল মান্নান। নগরীর ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই সভায় কোল, কোডা, পাহাড়িয়া, মুন্ডা, ওঁরাও, মাহালী, তুরি, তেলী, গঞ্জু, রাজোয়াড়, লোহার, বেদিয়া, মাহাতো, কুর্মী মাহাতো ও ভূমিজ ভাষার প্রতিনিধিবৃন্দ, ভাষা-সম্প্রদায়ের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, ভাষা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. আব্দুল মান্নান বলেন, “বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠীদের ভাষাগুলোর ভবিষ্যতের জন্য এই প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে যে ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করা হবে সেখানে প্রতিটি ভাষার প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এবং ভাষা নিয়ে আমাদের এই কাজটা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফলে কীভাবে এই ভাষাগুলোর নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হবে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ধরণের কাজ মানুষ টাকাপয়সার দিকে না তাকিয়ে ভালোবাসা ও দায়িত্বের দিকে তাকিয়ে করে থাকে। আপনারাও আশা করি এই কাজটার গুরুত্ব বুঝে, এই কাজের সফল বাস্তবায়নের ফলে আগামীতে যে লাভ হবে সেদিকে বিবেচনা করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। এই কাজের সফল বাস্তবায়ন ভাষা নিয়ে আরও অনেক দরকারি কাজের দরজা খুলে দেবে।"
ইবিএলআইসিটি'র প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গণেশ মার্ডি, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বারসিক এর সমন্বয়ক পাভেল পার্থ, ড্রিম ৭১ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশাদ কবির, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লসমী চাকমা।
সভার কারিগরী অধিবেশনে নৃগোষ্ঠী ভাষা বিষয়ক এই কম্পোনেন্টটি বাস্তবায়নের রূপরেখা তুলে ধরেন প্রকল্পের ভাষাপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও আলোচনাসভার সঞ্চালক মামুন অর রশীদ। পরে উন্মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত ১৫টি ভাষার প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের নিজ নিজ ভাষার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভাষা সংরক্ষণে করণীয় বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় তারা বিদ্যমান বিভিন্ন বইপুস্তক ও নথিপত্রে তাদের সম্পর্কে তুলে ধরা বিভ্রান্তিকর তথ্যের সমালোচনা করে এসব ব্যাপারে পেশাগত দায়বদ্ধতা বজায় রাখার অনুরোধ জানান। একইসাথে নৃগোষ্ঠীদের ভাষা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি আগামী আদমশুমারিতে যাতে তাদের সঠিক পরিসংখ্যান উঠে আসে এ ব্যাপারে আহবান ব্যক্ত করেন।
ইবিএলআইসিটি প্রকল্পের এই কম্পোনেন্টটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ৪০টি ভাষার অন্তত ১২,০০০ মিনিট স্পিচের আইপিএ উচ্চারণসহ অনুবাদ, প্রতিটি ভাষার জন্য সংক্ষিপ্ত ত্রৈভাষিক শব্দকোষ, নিজস্ব লিপি থাকা ভাষাগুলোর জন্য ইউনিভার্সাল কিবোর্ড, ফন্ট, ফনোলজিক্যাল চার্ট, এবং নৃগোষ্ঠীদের মৌখিক সাহিত্যের একটি সুবিন্যস্ত সংগ্রহশালা তৈরি হবে বলে সভায় জানানো হয়। এর ফলে বিপন্ন ভাষাগুলোর ডিজিটাল আর্কাইভিং এর পাশাপাশি নৃতাত্ত্বিক ভাষাভাষী মানুষেরা কিবোর্ডে নিজ মাতৃভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল জগতে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবেন। এই কম্পোনেন্টটির বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেড।