রাণীশংকৈলে নন্দুয়ার ইউপি চেয়ারম্যানের দুর্নীতি
মাহাবুব আলম রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে নন্দুয়ার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান জমিরুল ইসলাম “র নামে ভিজিড কার্ডের তালিকায় একান্তই দুস্থ মহিলাদের নাম না দিয়ে দুর্নীতি অভিযোগ উঠেছে । জানা যায়, অতি দরিদ্র মহিলাদের চূড়ান্তভাবে তালিকায় নাম না থাকা ও সরকারি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জমিরুল ইসলামসহ সদস্যরা মিলে তালিকায় নিজস্ব আত্মীয়-স্বজন ও নগদ অর্থের বিনিময়ে তালিকা প্রণয়ন করেছে বলে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বলিদ্বারা হটাৎ পাড়া গ্রামের ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান জমিরুলের ইশারাতেই ইউপি সদস্য আলমগীরসহ অনেকেই ভিজিডি কার্ড দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হটাৎ পাড়া গ্রামের বউমা (কাঞ্চন আক্তার )কে শশুরের স্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই গ্রামের মেঘমালা ও কাঞ্চন আক্তার বলেন, আজকাল টাকা পয়সা ছাড়া কি ভিজিডি কার্ড হবে?
এছাড়াও বলিদ্বারা বগুড়া পাড়া অহেদূর রহমানের স্ত্রী রুবি খাতুনের”র তালিকায় নাম দিয়ে ভিজিডি চাল আত্মসাত করার লক্ষ্যে অভিযোগ পাওয়া যায় । অহেদুর রহমান ও তার স্ত্রী জানান সংশ্লিষ্ট ইউপি পরিষদ সদস্য আলমগীর তাদের ভোটার আইডি কার্ড করোনা কালে আর্থিক সহযোগিতা করার নামে হাতিয়ে নেন । কিন্তু তাঁরা সে সময়ে কোন রকমের সহযোগিতা পাননি । তাঁরা ধারণা করেন উক্ত কার্ডটি ভিজিডি তালিকার কাজে ঐ সদস্য আলমগীর নিজে আত্মসাতের জন্য দিয়েছেন । এ বিষয়ে আলমগীরের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও দেখা গেছে যাদের বাড়ি-ঘর পাঁকা ও জায়গা জমি ২ বিঘা থেকে ৯ বিঘা পর্যন্ত রয়েছে তাঁদের নামও চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছে । এদিকে সাত ঘরিয়া ( সন্ধ্যারই ) গ্রামের নজিবুলের স্ত্রী সুরাইয়া বেগমের চাষ যোগ্য ২ বিঘা জমি ও পাঁকা ঘর রয়েছে । তারও নাম তালিকায় দেখা যায় । একই ভাবে জওগাঁও গ্রামে চেয়ারম্যান জমিরুলের নিজ স্বজনদের মাঝে ভিজিডি কার্ডের বেশির ভাগ তালিকায় নাম পাওয়া গেছে। পুরো ইউনিয়নের মধ্যে শুধুমাত্র জওগাঁও গ্রামেই চূড়ান্ত তালিকায় অর্ধশতাধিক নাম দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দরিদ্র মহিলা জানান , আজিমুল হকের স্ত্রী সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আক্তারা বানুর প্রায় ৮ বিঘা জমি ও ইটের পাঁকা ঘর থাকা সত্ত্বেও ভিজিডি কার্ডের তালিকায় তার নাম আছে , একই গ্রামের আবুল হোসেন ( মুদি দোকান ) স্ত্রী বিউটি আক্তার তারও প্রায় ৪ বিঘা জমি ও পাঁকা ঘর রয়েছে, মুরগি ব্যাবসায়ী জয়নুল আবদিনের স্ত্রী মাসুদা পারভীনের প্রায় ৩ বিঘা জমি রয়েছেে।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জমিরুলের বিরুদ্ধে কাবি-খা, টিয়ার, এলজি এসপি ও ভিজিডি কার্ডের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র পুরো ইউনিয়নেই এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ ব্যাপারে নন্দুয়ার ইউনিয়নের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু সুলতান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জমিরুল বিভিন্ন কৌশলে টাকা পয়সার বিনিময়ে ভিজিডি তালিকা প্রণয়ন করেছেন এমন অভিযোগ আমিও শুনেছি ।
যদিও সরকারি নিতি মালার তোড়ক্কা না করে চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব,ও সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নামের তালিকা অতি দরিদ্র মহিলাদের না দিয়ে আত্মীয় করন করেছেন এমন গুনজ্বন ইউনিয়ন জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
সরকারি নীতিমালায় দেখা গেছে, ‘ভিজিডি কার্ড ধারিরা মূলতঃ পরিবারের কর্মক্ষম, দূস্থ, বিধবা, তালাক প্রাপ্ত ও স্বামী পরিত্যাক্তা নারীরাই হবেন ভিজিডি উপকারভোগী।
কোন উপার্জনক্ষম সদস্য অথবা অন্য কোন স্থায়ী বা নিয়মিত আয়ের উৎস নেই, এমন দুস্ত মহিলারাই অগ্রাধিকার পাবেন ।
ভিজিডি নীতিমালার শর্তে উল্লেখ আছে যে, প্রকৃত অর্থে ভূমিহীন বা পরিবারে কোন জমি নেই ,বসত ভিটা নেই, চাষ যোগ্য ১৫ শতাংশের উপরে কোন জমি না থাকলে মূলতঃ ভিজিডি কার্ড পাবেন ।
অন্যদিকে নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের তালিকায় দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র । যাতে আছে আধা-পাঁকা ঘর ও চাষ যোগ্য জমির মালিকের স্ত্রীদের নাম।
সে কারণেই অতি দরিদ্র ও অসহায় মহিলারা এ তালিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন । একজন ভুক্তভোগী মহিলা অভিযোগ করে বলেন , ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বার বার তালিকাতে নিজের নাম দেখতে গিয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছি । চুরান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরেও টাঙ্গানো হয়নি নামের লিস্ট । কৌশলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে অফিস ডয়ারে ।
অথচ নীতি মালা অনুযায়ী উপকারভোগী মহিলাদের নামের তালিকা জ্ঞাতার্থে ইউনিয়ন পরিষদের নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দেওয়া কথা রয়েছে ।
এ বিষয়ে মুঠো ফোনে চেয়ারম্যান জমিরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সবকিছু সরকারি নীতি মালা অনুযায়ী করা হয়েছে এবং অভিযোগের বিষয়গুলি কৌশলে এড়িয়ে যান ।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা বলেন, আমরা চূড়ান্ত ভিজিডি তালিকা ইউনিয়ন পরিষদে নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দেওয়া জন্য নির্দেশ দিয়েছি । তবে তালিকায় কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে ।
ইউএনও সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
Leave a Reply