রেঞ্জ ডিআইজি, বরিশাল মহোদয়ের সভাপতিত্বে রেঞ্জের পুলিশ সুপারগণের সাথে অপরাধ পর্যালোচনা সভা এবং রেঞ্জের সকল সার্কেল অফিসার ও ওসিদের সাথে জুম (Zoom) প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়াল সভা রেঞ্জের সভাকক্ষে অনুষ্টিত।
০৬/০১/২০২১ খ্রিঃ তারিখ সকাল ১০:০০ ঘটিকা থেকে দিনব্যাপী বরিশাল রেঞ্জের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত অপরাধ পর্যালোচনা সভা এবং রেঞ্জের সকল সার্কেল অফিসার ও ওসিদের সাথে জুম (Zoom) প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন রেঞ্জ ডিআইজি জনাব মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয়।
বরিশাল রেঞ্জের অপরাধের সার্বিক চিত্র উক্ত সভায় প্রতিফলিত হয়েছে; রেঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে সভাপতি মহদয় দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জুম প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত মিটিং এ রেঞ্জের সকল থানার ওসি এবং সার্কেল অফিসারদের উদ্দেশ্য ডিআইজি মহোদয় মূল্যবান দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এর পূর্বে তিনি বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ অফিসারদের পুরস্কৃত করেন।
এসময় তিনি থানার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরো তথ্য/অভিযোগ বক্স স্থাপন করাসহ পূর্বের তথ্য/অভিযোগ বক্সের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সমাজ থেকে অপরাধ মূলোৎপাটনের কথা বলেন। উল্লেখ্য অত্র রেঞ্জে তথ্য/অভিযোগ বক্স কার্যক্রমটি চালু করা ডিআইজি মহোদয়ের একটি অন্যতম উদ্ভাবনী (innovative/brain-child) পুলিশিং কার্যক্রম।
বরিশাল রেঞ্জে বিট পুলিশিংকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে উক্ত কার্যক্রমে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের যুক্ত থাকার নির্দেশ দেন।
তিনি ওসিদের উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষের সমস্যার কথা শুনতে হবে; জিডি করতে/লিখতে শতভাগ সততা (integrity), স্বচ্ছতা (transparency), ন্যায়-নীতি ও জবাবদিহিতা বজায় রাখতে হবে; থানায় মুন্সি/বকসি বলতে কেউ থাকবে না; বেতার কন্সটেবল থানার কোনো কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হবে না; পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে নির্ঝঞ্জাট; ব্রিটিশ কলোনিয়াল টাইপ পুলিশিং এর অন্ধকার জগত থেকে বের হতে হবে।
স্বচ্ছতা, সততার (integrity & transparency) ব্যাপারে মানুষকে আমরা মেসেজ দিতে চাই- তাই ইন্টারনাল করাপশন বন্ধে আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশনা সর্বোতভাবে মেনে চলার কথা তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
ফোর্সের উদ্দেশ্যে ডিআইজি মহোদয় বলেন, rectify yourself first- avoid brutal behavior. তিনি বলেন, আমরা হবো আধুনিক বিশ্বের পুলিশ; তাই মানুষের মাঝে আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে হবে। আচরণগত পরিবর্তন করে সর্বাধুনিক knowledge-based, intelligence-led policing করে আমরা সমাজে মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে বাঁচতে চাই।
বাংলাদেশ পুলিশের অর্জনসমূহকে ধরে রাখতে হবে- অন্তত বরিশাল রেঞ্জে নিয়মের কোনো ধরনের ব্যত্যয় দেখতে চাননা বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি মামলা তদন্তের মান বাড়াতে সর্বাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্য নিতে বলেন, মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণের ডিজিটালাইজেশনের কথা বলেন।
মিথ্যা ১৬৪ (CrPC) নয়- আদালতে গ্রহণযোগ্য সাপোর্টিং এভিডেন্স ও ফিজিক্যাল এভিডেন্স এর ভিত্তিতে সাক্ষ্য/অপরাধীর স্বেচ্ছাকৃত জবানবন্দী গ্রহণ করতে হবে।
জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল হবে আধুনিক ইনফো বেজড- লিডিং কোয়েশ্চেন, guided interrogation করে অপরাধের তথ্য বের করতে হবে। অযৌক্তিক কারণে রিমান্ড নয়- ২৪ ঘন্টার বেশি আটক রাখা নয়, শারীরিক টর্চার নয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের সময় ও পরে এবং রিমান্ডের বিষয়ে হাইকোর্টের ডাইরেক্টিভস অনুসরণ করতে হবে; এএসআই ওয়ারেন্ট ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করবে না- মাদকের ক্ষেত্রেও নয়।
মিডিয়া ফোকাসের বিষয়ে তিনি দায়িত্বশীলদের বলেন, বেফাস মন্তব্য নয়; সাইবার ক্রাইম ও সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং বাড়াতে তিনি নির্দেশ প্রদান করেন।
সকলের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা- বিশেষ করে অন্য বাহিনী/ডিপার্টমেন্টের লোকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে concerted/coordinated হয়ে দেশের উন্নতিতে কাজ যাওয়ার জন্য সভাপতি মহোদয় সকলের প্রতি আহবান জানান।
সর্বোপরি, ডিআইজি মহোদয় রেঞ্জের অপরাধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, করোনা পরিস্থিতি, মাদকসেবী/ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন, লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা, নিরাময়কেন্দ্রে চিকিৎসা ইত্যাদি এবং আত্মসমর্পন করে পুনরায় মাদকের সাথে জড়ানোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়ে এবারের অপরাধ সভায় দিনভর তাঁর মূল্যবান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
উক্ত অপরাধ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন রেঞ্জ কার্যালয়ের অ্যাডিশনাল ডিআইজি, উক্ত রেঞ্জে বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের পুলিশ সুপারগণ, রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার এবং ইন্সপেক্টরসহ রেঞ্জ পুলিশের অন্যান্য অফিসারবৃন্দ।
Leave a Reply