জিহাদ হোসেন রাহাতল, ক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ
ভেজালমুক্ত ও অর্গনিক খাদ্য খুঁজে পাওয়া এখন দায় হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অনেকটা আস্থার স্থান ধরে রেখেছে ডাব। অবশ্য এই ডাবের জন্য সুপ্রাচীন কাল থেকেই বিখ্যাত দেশের দক্ষিনের জেলা লক্ষ্মীপুর। বর্তমানে প্রচণ্ড গরমে ডাবের কদরও বেড়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার ডাব স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। ১২ মাস ধরেই চলে এ ব্যবসা। শীতকালে ডাবের চাহিদা কম থাকায়, ডাব না কেটে নারিকেল পর্যন্ত রাখা হয়। ডাব- নারকেল ঘিরে জেলায় বিদ্যমান আড়ৎ ছাড়াও আরো অন্তত পাঁচটি আড়ৎ গড়ে উঠেছে। এ জেলা থেকে প্রতি মাসে আনুমানিক ১কোটি ৫০ লাখ টাকার ডাব-নারকেল কেনাবেচা হয়। জেলার উপজেলাগুলোয় রয়েছে ছোট বড় শতাধিক ডাব-নারকেল ব্যবসায়ী।স্থানীয়রা জানান, প্রচণ্ড গরমে এখন ডাব ব্যবসা রমরমা। বসতবাড়িতে, পতিত জমিতে, উঁচু জমিতে, বাগানে, রাস্তার পাশে, ঘেরের পাড় সহ বিভিন্ন জমিতে লাগানো গাছ থেকে উৎপাদিত হয় ডাব।
জেলার রায়পুর পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে ডাবের ব্যবসা করেন মাসুম। তিনি বলেন, সামান্য পূঁজি নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করেছিলাম। প্রথম দিকে নিজে ডাব কিনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতাম। দিনে দিনে ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৪ থেকে ৫ হাজার পিস ডাব ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে পাঠাই ।প্রতি সপ্তাহে একটি করে চালান পাঠাতে হয়। এতে এক লাখ টাকার বেশি ডাব থাকে। আর এই ডাব পাঠাতে ট্রাক ভাড়া বাবদ খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
অবশ্য গ্রামে গ্রামে বড় ব্যবসায়ীদের ৩৫-৪০ জন করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ডাব সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।
তারেক নামের স্থানীয় আরেক ডাব ব্যবসায়ী বলেন, গাছ থেকে সংগ্রহ করা ডাব তিনটি গ্রেডে ভাগ করা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্থানীয়দের কাছ থেকে আকার ভেদে ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা প্রতি পিস ক্রয় করে। স্থানীয় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে সেই ডাব তারা বিক্রি করে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা করে। বড় ব্যবসায়ীরা এই ডাব ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে পাইকারি বিক্রি করে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পিস। আর ভোক্তাদের কিনতে হয় ৯০-১০০ টাকায় । ৬ নম্বর কেরোয়া ইউনিয়নের হারুন পাটওয়ারী নামের এক গাছ মালিক বলেন, আমার প্রায় ১০ থেকে ১৫টি নারিকেল গাছ রয়েছে। যা থেকে বছরজুড়ে আমি ডাব ও নারকেল বিক্রি করি। ডাব ব্যবসায়ীদের আমার খুঁজে আনতে হয় না। গাছের ডাব বিক্রি করার উপযুক্ত হলে তারা নিজেরা এসে তা খুব যত্ন সহকারে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
অবশ্য গরমের এই সময়ে ডাবের চাহিদা থাকলেও হঠাৎ করেই তুঙ্গে উঠেছে নারিকেলের দাম। প্রতি পিস নারিকেল গাছ মালিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা দরে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুর প্রায় ২ হাজার ৬শত ৫০ হেক্টর জমিতে নারিকেল বাগান রয়েছে। প্রতি বছর এ জেলায় ৫ কোটি ৩০ লাখ পিস নারিকেল উৎপাদন হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকারও বেশি। চলতি মৌসুমে এক জোড়া নারিকেল বিক্রি হচ্ছে, ১৪০-১৫০ টাকা। যা কিনা বিগত বছরগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
নারিকেলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় চড়া দামে মোকামে মজুদ করছেন জেলার দালাল বাজার ও রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জ উপশহরের আড়ৎদাররা।