জিহাদ হোসেন রাহাত।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
খুশি-আনন্দ বয়ে আনে ঈদ। মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঈদের একটি- ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আনন্দ আয়োজনের প্রাথমিক সব প্রস্তুতি শেষ করেছে লক্ষ্মীপুরের পর্যটন স্পটগুলো। জেলার রায়পুর উপজেলার আলতাফ মাষ্টার ঘাট, রামগতির মেঘনা বিচসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র ঈদকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। একনজরে আলতাফ মাষ্টার ঘাট :লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় মনোরম দৃশ্যমাখা গ্রামীণ পরিবেশ প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে আলতাফ মাষ্টারের ঘাট এলাকায় মিনি কক্সবাজার। এখানে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা থাকে প্রায় সময়। আর হাতের কাছে এমন সুন্দর, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে রাজধানীসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মিনি কক্সবাজার মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নিরিবিলি এই স্থানে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। নদীর কল কল ধ্বনি কানে আসলে কি যে ভালো লাগে তা না গেলে বুঝা যাবে না। এখানে আসার উত্তম সময়ই হলো শীতকাল কেন না অন্য মৌসুমে এলাকার পরিবেশ ভালো থাকে না। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য বিহীন প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যমাখা গ্রামীণ পরিবেশে আপনি বনভোজনের স্থান হিসেবেও নির্বাচন করতে পারেন। আলতাফ মাষ্টারের মাছঘাটে রায়পুরে মেঘনা নদীর পাড়ের ব্লক গুলোতে বসে আপন মনে ভাবতে পারেন প্রিয় জনের কথা, দেখতে পারেন সূর্যাস্তের মত অপরূপ দৃশ্য, পাশে বিশাল আকৃতির খোলা জায়গা।নদীতে ভ্রমণ করার মত নৌকার ব্যবস্থা সব সময় না থাকলেও ওখানে থাকা নৌকার মালিকদের সাথে আলাপ করে তা ব্যবস্থা করা সম্ভব। থাকার মত আবাসিক হোটেল হয়তো নেই এখানে কিন্তু টিম নিয়ে আসলে খোলা আকাশের নিচে তাম্বু দিয়ে থাকার জায়গার অভাব হবে না। বনভোজনের জন্য সুন্দর স্থান এটি, একসাথে কয়েক হাজার লোক এখানে ভ্রমণ করতে পারবে। এখানে আশেপাশে ভালো মানের ৩/৪ টি খাওয়ার হোটেল ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আছে সেহেতু আসার সময় আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। আলতাফ মাষ্টারের মাছঘাট ও মিনি কক্সবাজার যেভাবে যাবেন: নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী সিএনজি করে রায়পুর হয়ে হায়দারগঞ্জে, পাটোয়ারি রাস্তা, বাসাবাড়ি বাজার নামতে হবে। এখান থেকে আঞ্চলিক সড়কে চরইন্দুরিয়া মেঘনাবাজার এলাকায় দিয়ে ২কি.মি সোজা গাড়ি চালিয়ে নতুন সলিং সড়কে দিয়েও ওই স্থানে যাওয়া যায়। সরকারি অথবা বেসরকারি সঠিক উদ্যোগে মিনি কক্সবাজার হয়ে যেতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলে সরকারি অথবা বেসরকারি কোন রিসোর্ট নেই তাই আলতাফ মাষ্টারের মাছঘাট মেঘনার অববাহিকা মিনি কক্সবাজার এই স্থানটিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটু সুদৃষ্টি দিলে এ অঞ্চলের উপকূলের বঞ্চিত মানুষগুলো কিছু সুবিধা পাবে।
প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের আলতাফ মাষ্টারের নতুন মাছঘাট চলে আসতে পারেন। ঘাটস্থ মেঘনার পাড় যেকোনো বিশেষ দিনে এই দুই স্থানে ব্যাপক মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেড়াতে আসে ভ্রমণ পিপাসু লোকজন। চরইন্দুরিয়া সংলগ্ন মেঘনা নদীর মেঘনার পাড় এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সম্ভাবনার কথা বলে। উপকূলীয় অঞ্চলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে হয়ে যেতে পারে নিদারুণ রিসোর্ট। উপকূলের প্রাকৃতিক নিদর্শন রিসোর্টে রূপদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
আলতাফ মাষ্টার ঘাটের কলাপাতা হোটেল অ্যান্ড চাইনিজ রেস্তোরার মালিক ও ব্যবস্থাপক মো. সবুজ খান জানান, এখানে মাছ ও মাংসসহ সব আইটেমের খাবার পাওয়া যায়। দিনে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। সরকারি ছুটির দিনে এক লাখ টাকাও বেচা-কেনা হয়ে থাকে। এখানে ন্যায্য মূল্যে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। ঈদে পর্যটকদের চাপ থাকে। ঈদকে ঘিরে আমরা পর্যটকদের সেবা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর।
শুধু আলতাফ মাষ্টার ঘাটই নয়, প্রস্তুত আছে আলেকজান্ডার মেঘনা বিচও। ঈদে ঘুরাঘুরি আর আনন্দ উপভোগের অন্যতম জন্য ভ্রমণ স্পট এটি। জেলার রামগতি উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এটি। মূলত এটি একটি বেড়িবাঁধ। মেঘনার ভাঙন থেকে জেলার রামগতির ভাঙন কবলিত মানুষের ভিটে রক্ষার জন্য এ নদীবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। আলেকজান্ডার শহর ঘিরে এ বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। শহর ও নদী খুব কাছাকাছি হওয়াতে পর্যটকরা ইচ্ছে করলেই বেড়িবাঁধে যেতে পারেন। তাই এখানে পর্যটক সমাগম তুলনামূলক অনেক বেশিই। এ বেড়িবাঁধ থেকে দক্ষিণে তাকালে কোনো জনপদ চোখে পড়বে না। দক্ষিণে যতদূর চোখ যাবে, চোখটা যেন নদীর দিকেই ছুটবে। নদীর ঢেউগুলো আছড়ে পড়ে বাঁধের ওপর। লোক সমাগম দেখে স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগও হাতে নিয়েছে। পর্যটকরা ভ্রমণে ক্লান্ত হলে একটু বসে যেন ক্লান্তি দূর করতে পারে সে ব্যবস্থাটুকু করা হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি আরো একটি দারুণ দৃশ্যের দেখা মিলে এই নদীপাড়ে। এখানে স্থাপন করা হয়েছে ল্যাম্পপোস্ট। ফলে রাতের বেলায়ও নির্বিঘ্নে নদীরপাড়ে আড্ডা, গল্প জমানো সম্ভব হচ্ছে। শুধু প্রশাসন নয়, এ সৈকতের সুরক্ষায় ‘স্বপ্ন নিয়ে’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগও নিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সৈকতের পরিবেশ যেন পরিষ্কার থাকে।ক্লান্তি, অলস সময় ও নাগরিক কর্মব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে অনেকেই প্রশান্তির ছোঁয়া খোঁজেন এখানে।
ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত রয়েছে মতিরহাট মেঘনা সৈকতও প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে গড়ে ওঠা এ স্থানটি ইতিমধ্যে নজর কেড়েছে কাছের ও দূরের পর্যটকদের। ভ্রমণপিপাসু বহু পর্যটক ও পর্যটনমুখী অনেক সংগঠনের পা পড়েছে জেলার কমলনগরের মতিরহাটের মেঘনাতীরে। এখানের সুন্দর সৈকত যেকারো মনের গভীরে নাড়া দিবে। বিশাল বেলাভূমি নিয়েই এখানে সৈকত জেগে আছে। যে কেউ চাইলে বেলাভূমির পথ ধরে হাঁটতে পারবে বহুদূর। ইচ্ছে করলে নদীতে গোসল করতেও কারো জন্য মানা নেই। এখানে সৈকত ও বেড়িবাঁধ দুটোই রয়েছে। আর নদীরপাড়ে নারকেল-সুপারির বিশাল বাগান তো আছেই। যেখানে বেলা কাটানো কোনো ব্যাপারই না।
Leave a Reply