অপরুপ মিতালী। পাড় ঘেঁসে লক্ষ্মীপুরের লক্ষ্মী ফসল সুপারির বাগান। এর মাঝেই অবস্থান নয়নাভিরাম খোয়াসাগর দীঘির। দুপুরের তপ্ত রোধে পানির ঝলকানি আর বিকেলের পর্যটক সমাগমে মুখরিত থাকে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজারস্থ এই পর্যটন স্পট।
রায়পুর-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের পাশের এই দীঘির দুরত্ব জেলা শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার নয়নাভিরাম এই দীঘিটি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই ভীড় জমান অন্তত পাঁচ সহস্রাধিক পর্যটক। ঈদ কিংবা ছুটির দিনে এই সংখ্যা থাকে উল্লেখিত সংখ্যার কয়েকগুন বেশি।
দীঘিটি বিগত এক দশকে পর্যটকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এটির ইতিহাস সুপ্রাচীন। আজ থেকে প্রায় ২শ পঞ্চাশ বছরের পুরোনো এই দিঘি দালাল বাজার এলাকার জমিদার ব্রজবল্লভ রায় স্থানীয় মানুষের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে ১৭৭৫ সালের দিকে দিঘীটি খনন করেন। খনন কাজের পর পালকি যোগে এক নববধূ দিঘীটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। গন্তব্য দূরে হওয়ায় এই দিঘির পানি পান করে সেই নব বধূ নিজেন তৃষ্ণা মেটাতে চেয়েছিলেন। সে সুবাদে পালকিবাহকদের বলে নব বধূ পালকি থেকে নেমে পানি পানের উদ্দেশ্যে দিঘির পাড়ে যান। পরে ঘন কুয়াশায় তাকে দেখা না গেলে স্বজন ও পালকিবাহকরা দেখতে গেলে সেখানে পাওয়া যায়নি তাকে। অবশ্য কিছুটা ভৌতিক সেই ঐতিহাসিক ঘটনার চর্চা বন্ধ হয়নি এ যুগেও। সে নব বধূর হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা লোকমূখে চর্চিত হলেও শেষ পর্যন্ত তার পরিনতি কি হয়েছিলো তা বলতে পারেন না কেউই।
ইতিহাস বিজড়িত এই দীঘি নিয়ে লোকমুখে রয়েছে নানান সব গল্প। এর নামকরণেও রয়েছে যুক্তিপূর্ণ একটি ইতিহাস। প্রায় ২২ একর জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা দীঘির একপাশ থেকে আরেকপাশ পরিষ্কার দেখা যায় না। এক দৃষ্টিতে তাকালে মনে হয়, দীঘিটি যেন কুয়াশাচ্ছন্ন। লক্ষ্মীপুরে স্থানীয় ভাষায় কুয়াশাকে ‘খোয়া’ বলা হয়। আবার এই দীঘির আকৃতি এবং পানির মনোমুগ্ধকর দৃশ্যকে সাগরের পানির সাথে তুলনা করে স্থানীয়রা। মূলত এ দুটি যুক্তিতেই দীঘিটিকে ‘খোয়াসাগর’ দীঘি বলে ডাকা হয়।
দীঘির দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টসহ বাহারি সব খাবারের দোকান। রয়েছে শিল্পাঙ্গন নামে একটি মিনি পার্টি স্পটও। দীঘিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে দুটি সাধারন ও হাঁস সদৃশ প্রায় চারটি নৌকো। নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পর্যটকরা সেগুলোয় চড়তে পারেন। অনিন্দ্য সুন্দর দীঘিটির এক পাশে জেলা প্রশাসক লক্ষ্মীপুরের উদ্যোগে সংস্কার কাজ করায় এটির সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়েছে। ফলে আগের তুলনায় আনুপাতিক হারে বাড়ছে পর্যটক সমাগমও।